শব্দপাঠ লিটলম্যাগ | লন্ডন, যুক্তরাজ্য

সাক্ষাৎকার :ওয়ালি মাহমুদ

প্রিন্ট এন্ড অনলাইন প্রেস

ফরিদা ইয়াসমিন তিথি

 

ওয়ালি মাহমুদ। পুরো নাম মোহাম্মদ ওয়ালিউর রহমান মাহমুদ। বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার জলঢুপ পাতন গ্রামে ১লা আগস্ট ১৯৭২ সালে দেওয়ান ভিলা’য় জন্ম গ্রহণ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন পাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। একই বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে লাউতা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক এবং সিলেট এমসি কলেজে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। সিলেট আইন মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১৯৯৫ সালে, কিন্তু প্রবাসে চলে যাবার কারণে সম্পন্ন করতে পারেননি। শিক্ষার প্রতি অফুরাণ আগ্রহে তিনি বিলেতেও বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করেন। টাওয়ার হ্যামলেটস্ কলেজ থেকে সিইএলটি করেন। লেভেল ২-৩, প্রিপারেশন ফর ওয়ার্ক কোর্স করেন এইচএবিসি ইংল্যান্ড থেকে। সিসি ইন আইসিটি (ইন্টার.); সোসিয়্যাল ইংলিশ; পিপল অ্যান্ড প্লেইসেস; এডুকেশন অ্যান্ড ওয়ার্ক উল্লেখযোগ্য কোর্সগুলো তিনি ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডশ্যায়ারের অপাল এডুকেশন থেকে সম্পন্ন করেন। ম্যাগাজিন সাব-এডিটর হিসেবেও কাজ করেন এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট, অপাল এডুকেশন হার্টস-এ।

 

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী পরিবারের সদস্য হিসেবে শৈশব থেকেই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, ক্ষুদিরাম থেকে বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ এসব পাঠ্যক্রমের মধ্যেই ওয়ালি মাহমুদের বেড়ে ওঠা। তাঁর প্রপিতামহ দেওয়ান এম. মনসুর আলী অখণ্ড ভারতের ইন্ডিয়ান ন্যাশন্যাল কংগ্রেস (আইএনসি) ও ভারত ভাগের পর আওয়ামী লীগ রাজনীতির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে আমৃত্যু জড়িত ছিলেন।  পিতামহ মাকমদ এ মাহমুদ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রবাসী সংগঠক এবং তাঁর পিতা শিক্ষাবিদ মতিউর রহমান মাহমুদ মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। এঁদেরই যোগ্য উত্তরসূরী- ওয়ালি মাহমুদ। ওয়ালি মাহমুদের মাতামহ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর হলওয়েল মুভমেন্ট আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহনকারী বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, কথাসাহিত্যিক এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তবাংলা পত্রিকার সম্পাদক, আকাদ্দস সিরাজুল ইসলাম এবং মাতামহী মিসেস ময়রুন্নেছা চৌধুরী।

 

স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় ’৯০ সালে পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা তাঁর বাড়ী রেইড করে। তখন তাঁর দুটি গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি ও স্বৈরাচার বিরোধী, সাম্প্রদায়িকতা এবং বর্ণবাদ বিরোধী লেখা অনেক কবিতা নিয়ে যায়। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে বাংলাদেশে ও ইংল্যাণ্ডে জনমত তৈরীসহ বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত থাকায় তাঁকে হত্যার হুমকিসহ বিভিন্নভাবে অপরাজনীতির শিকার হতে হয়। বাংলাদেশে তাঁর পরিবার বিভিন্ন হুমকির শিকার হন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধীতাকারী- রাজাকার, শান্তি কমিটি, আল বদর,আল শামসসহ যারা সংশ্লিষ্ট ছিল- তাদের তথ্য এবং গণহত্যার তথ্য সংগ্রহ করেন। একজন চারণ সংগ্রাহক হিসেবে প্রাসঙ্গিক তথ্য উপাত্তসমগ্র মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার কাজে এবং রণাঙ্গণ ৭১ গ্রন্থে ব্যবহৃত হয়।

 

তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব; মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ডের সিলেট জেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি; ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সিলেট জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক; ইংল্যান্ডের বিয়ানীবাজার এসোসিয়েশন অব ডরসেট কাউন্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি; শহিদ মনু মিয়া স্মৃতি পরিষদ বাংলাদেশ চাপ্টারের সমন্বয়ক; ট্রাস্টি, বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট; যুক্তরাজ্য; পাতন আব্দুল্লাপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দু’বারের (২০১৬-১৭ খ্রি.; ২০১৮-১৯ খ্রি.) নির্বাচিত সভাপতি; ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত দেওয়ান মনসুর এস্টেট ফান্ড ট্রাস্ট-এর পরিচালক; বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ’ স্থায়ী কমিটির সদস্য; সহসভাপতি, স্বদেশ সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ; ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আইওএম সমন্বিত ব্রাক বিজনেস অ্যাডভাইজরি কমিটি বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মাইগ্রেশন ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাপ্তাহিক নবদ্বীপ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব এবং লন্ডনের ৫২ বাংলা টিভি’র সাহিত্য সম্পাদক উল্লেখযোগ্য।

১৯৮৬ সালে দেয়াল পত্রিকার মাধ্যমে প্রথম লেখালেখির হাতে খড়ি। এ সময়ের বাংলা কবিতার সঙ্গে যার ঘর-সংসার। কাব্যের জগতে কখনো গদ্যের তীরে হাঁটতে হাঁটতে কুশিয়ারা, কখনোবা পদ্যের তীর ঘেঁষে সুনাই অথবা বিলেতের টেমস অবধি। অব্যয়ী বিবর্তনা দিয়ে কাজ করেন। কবিতার ঘর বানাতে বিশুদ্ধ বাংলার গাঁথনি’দি শুরু করেও কাঁচামাল হিসেবে কোন সময় নাগরী, আবার কোন সময় হোকনিয়ার পাশ দিয়ে তিস্রী বিলের ফুলেল বসন্তও বাদ যায়নি। প্রকৃতি, নদী ও নারীর সমষ্টি তার লেখায় মূর্ত। ভালবাসার বিমূর্ত আবেগকে তিনি কাব্যের চয়নিক শব্দ-কল্প, উপমার বোধানুকূল প্রয়োগ করেছেন বিভিন্নভাবে।

নিজের প্রজ্ঞা ও সৃষ্টিশীলতার সুহৃদ দিয়েছেন সমকালকে। সুশীলতা, বিনয় ও সৌজন্যতায় গড়া একজন সভ্যতাভিমানী মানুষ তিনি। সেটা তাঁর কবিতায়ও প্রতীয়মান। পরিমিতিবোধ সম্পন্ন কবিসত্ত¡ার নবায়নে নিয়ত: মগ্ন তিনি-তাঁর কবিতায়। ব্যক্তি ও সমষ্টির প্রতিনিধি হিসেবে ওয়ালি মাহমুদ কাজ করেছেন-সমাজের বিভিন্ন অঙ্গণে। একজন নিভৃতচারি ও সাহিত্য এবং সমাজ নিবেদিত মানুষ হিসেবে জ্ঞান পিপাসু ও নির্মোহ জীবনের বিস্তৃতিই তাঁর চারণক্ষেত্র।

তাঁর চিন্তা চেতনা ও রাজনীতির দর্শন-একই সূত্রে গাঁথা। বর্ণময় জীবনের আত্মমগ্ন- কবি ওয়ালি মাহমুদ। কাব্যের সংব্যান খোলার আশায়-তিনি কখনো বৈরাগী হয়ে প্রেম তীর্থ ভ্রমণে, কখনো উদ্দাম তারুণ্যে ভালোবাসার অসীম আকাশ ছুঁয়েছেন বিচিত্র আঙ্গিকে। অন্যদিকে অনুভূতির তীব্র দাহনের উপস্থিতি তার কবিতায় লক্ষণীয়। নিয়মমাফিক বৃত্তের বাইরে স্বতন্ত্র অবস্থানের পুনঃপুনঃ প্রচেষ্টায় মলাটবন্দি কাব্যের পঙ্ক্তিমালার সযত্ন সৃষ্টি, কবিতাকে চিনিয়ে দেয় গভীরভাবে।

মিশরের কায়রো থেকে প্রকাশিত বিশ্বের ৩৮টি দেশের ১৫০ জন খ্যাতনামা কবির কবিতা সংকলন The Silk Road Anthology: Ancient Egyptians, Modern Poets 2021 গ্রন্থে স্থান পেয়েছে কবি ওয়ালি মাহমুদের কবিতা। Clever Fox থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক কবিতা সংকলন The Space, an International Poetry Anthology 2021; Kametsa Magazine in Peru; P|O|L is an international literary magazine published in the UK; World Poetry Movement, Arabian Nights, World Poems, The Silk Road Literat Clever Fox ure Anthology 2022. Darjeeling Magazine India, English Poets Bangladesh USA (Tradition of creating National Anthology); La Fenetre de Paris, Vol-ll (An Anthology of Poets from different countries on La France); Udvas- International monthly Issue 2022; Tripura, India; MA Issue France, Nano Poems Africa. সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকলনে স্থান পেয়েছে তাঁর কবিতা।

তাঁর সাক্ষাৎকার-যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, আরব আমীরাত, ভারত, বাংলাদেশ, মিশর থেকে বাংলা, ইংরেজী ও আরবী ভাষায় লিটলম্যাগ, জার্নাল, প্রিন্ট এবং অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।  এছাড়াও লন্ডন থেকে সম্প্রচারিত- সাউন্ড রেডিওতে ২০০৪ সালে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব খাদিজা রহমান এবং বেতার বাংলা রেডিওতে কথা ও কবিতা লাইভ অনুষ্ঠানে ওয়ালি মাহমুদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার ফেব্রæয়ারি ০৭, ২০১৩ সালে অন এয়ারে সম্প্রচারিত হয়। বিশিষ্ট মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেলী ফাওজিয়া সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।

 

ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী ফারজানা বিএল মাহমুদ, তিন কন্যা-যারীন সোফিয়া মাহমুদ ও মেহরীন ওয়ালি মাহমুদ এবং হাসিনা ওয়ালি মাহমুদ নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ও গবেষণা এবং সম্পাদিত লিটলম্যাগ যথাক্রমে:

 

(ক) কাব্যগ্রন্থ:

ভালোবাসার পোয়াতি (কোলাজ, ১৯৯৯), যৈবতী শোন (কোলাজ, ১৯৯৯), একটি দীর্ঘশ্বাসের মৃত্যু DEATH OF A SIGH (উৎস, ২০০১), আমি এক উত্তরপুরুষ ও I AM THE DESCENDANT (উৎস, ২০০২), নির্বাসনে, নির্বাচিত দ্রোহ (ম্যাগনাম ওপাস, ২০০৪), ১২৩৭ দাগ (এডিটর’স ইংল্যান্ড, ২০১৪), হৃদয়ের ভাষা Language of the heart (মেঘ, ২০২২), নিষিক্ত পরত Fertilised Layer  (মেঘ, ২০২২)।

 

(খ) ডায়াস্পোরা গবেষণা:

দ্রোহী কথাসাহিত্যিক আব্দুর রউফ চৌধুরীর সাহিত্যসম্ভার (এডিটর’স ইংল্যান্ড, ২০১৩) ।

 

(গ) সম্পাদিত লিটলম্যাগ:

কবিয়াল (সম্পাদিত, ১৯৯২), শিকড় (সম্পাদিত, ১৯৯৪) ও ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত লোকন লিটলম্যাগ (২০০৯-১৪) সম্পাদনা করেন।

সময়ের প্রতিচ্ছবি, সাহিত্যের শৈল্পিক ভাষায়।

-ওয়ালি মাহমুদ।

সাক্ষাৎকার প্রিন্ট এন্ড অনলাইন প্রেস

 

সাক্ষাৎকারটি- যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, আরব আমীরাত, ভারত, বাংলাদেশ, মিশর থেকে বাংলা, ইংরেজী ও আরবী ভাষায় লিটলম্যাগ, জার্নাল, প্রিন্ট এবং অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কবিতা ও বিভিন্ন বিষয়াদির আঙ্গিক নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফরিদা ইয়াসমিন তিথি

 

 

আপনার কেন কবিতার সঙ্গে সখ্যতা?

কবিতাকে ভালোবাসি।

 

কবে থেকে লেখালেখি শুরু করেন?

মাধ্যমিক স্কুল থেকে হাতেখড়ি বলা যায়।

 

কোন ম‚হূর্তকে ‘ভালো’ হিসেবে দেখেন?

যখন কবিতা লিখি।

আর খারাপ?

 

যখন ব্যর্থ হই।

কিরকম?

 

মনের উপর জোর করে কোনকিছু ইম্পোজ করতে পারি না। যা আসে স্বাভাবিকভাবেই আসে। জরুরী হল সেগুলো ধরে রাখা। ট্রুলি সে ধরে রাখার আদ্যোপান্ত সময়টা আমার জন্য কঠিন এবং খারাপ সময়।

 

আপনার কমিটমেন্ট কি?

সময়ের প্রতিচ্ছবি-সাহিত্যের শৈল্পিক ভাষায়।

 

কোন কোন ছন্দে কাজ করেন?

মূলত মুক্তক ছন্দে।

 

এখনকার কবিতার সঙ্গে পাঠকের দূরত্ব দেখতে পাই। এজন্য কি কি কারন থাকতে পারে?

আপনি যে দূরত্বের কথা বললেন, সে দূরত্বকে আমরা দু’ভাগে ভাগে করতে পারি। এক-ভাষাগত, দুই-পাঠকের প্রস্তুতিগত। ভাষাগত দিক থেকে যেমন-অপ্রচলিত শব্দের ব্যবহার। বিশেষত মানুষের মুখের ভাষা, বিদেশি শব্দ কাব্যে স্থানান্তর। যেমন বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর কবিতায় আরবী, ফার্সী, থেকে অনেক শব্দের ব্যবহার করেছেন। অন্যদের কথা না-ই বললাম। এবার পাঠকের প্রস্তুতিগত প্রসঙ্গের ভ‚মিকায় বলব যে, কবিতা সেখানে সংবেদনশীলতা, আবেগের উচ্ছ¡সিত অনুভ‚তি থাকে, থাকে ভাষার তনদুরস্তি। কথা হ’ল একটি দীর্ঘ দিনের সমসময়িকীতে অভ্যস্ত পাঠক স¤প্রদায়, যখন প্রতিষ্ঠিত এবং চলমান রীতি ভেঙ্গে নতুন ধাঁচের কবিতা পড়েন, তখন দ্বিধান্বিত হন। তাদেরকে স্বাভাবিক করে নিতে লাগে সুদীর্ঘ সময়। তার চেয়ে বড় কথা হল প্রাত্যহিক জীবনযাপনের সঙ্গে কবিতা ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা এবং নোয়াম চমস্কি কথিত পাঠকের লিটারারি কম্পিটেন্স অ্যান্ড পারফরমেন্স-এর একটি ব্যাপারকে আমি গুরুত্ব দিয়ে থাকি ইত্যাদি।

 

প্রচলিত ধারা কিভাবে পরিবর্তন যোগ্য?

ভাষার অবকাঠামো পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে সাধারণত অগ্রণী হয় নতুন প্রজন্ম। ও এ প্রজন্মই একসময় পরিণত হন। কিন্তু এই পরিণত হতে গিয়ে অনেকেই হারিয়ে যান। যারা টিকে যান, তারা ধারা পরিবর্তনের সহায়ক হয়ে উঠেন।

 

কথ্য ও লোক কথা এবং সাহিত্যের মলাটবন্দী অংশ সংগ্রহণ এ সম্পর্কে আপনার অভিমত?

কথ্য ও লোক কথার ডেফিনেশন তো সবাই জানেন। সভ্যতার ক্রমবিকাশে কথ্য ও লোক কথা একটি বিরাট অংশ দখল করে আছে। যা জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা এটাকে কিন্তু সাহিত্যের বাইরে দেখিনা । অবিচ্ছেদ্য ভাবেই দেখি। মলাটবন্দী সংগ্রহ প্রসঙ্গে ১৮১৭ সালে কোলরিজের বায়োগ্রাফিয়া লিটারারিয়া গ্রন্থের কথা বলতে পারি। কিংবা স্যার জর্জ গ্রিয়ারসনের লিঙ্গুয়াস্টিক সার্ভে অব বেঙ্গল’-এর ৫ম খন্ডের কথা অথবা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান ইত্যাদি গ্রন্থগুলো কথ্য ভাষার যুগোপযোগী সংগ্রহ বলা যায়। আপনারা জানেন, চেম্বারস্ টুয়েনটিথ সেঞ্চুরি ডিক্শনারি’র কথা, যার অর্ধেকেরও বেশী শব্দই বিদেশী। আবার তিনশতাধিকের মতো বাংলা শব্দ ইংরেজীতে রূপান্তরিত হয়েছে। যার অধিকাংশই প্রচলিত বাংলা শব্দ’র স্থায়ী রূপ। অন্যান্য অভিধানগুলোও দেখতে পারেন।

 

আপনার কবিতায় আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার হচ্ছে-সে অভিযোগ আমার…

এ বিষয়ে কমেন্ট না করে বলব ড. রেণু লুৎফা’র ভাষায়,‘আমরা যদি ইংরেজী ভাষার দিকে তাকাই তাহলে প্রতি বছরে এরা দুনিয়ার তাবত ভাষা থেকে কয়েকটি শব্দ এনে নিজেদের ভাষাতে যোগ দিচ্ছে। অন্যদিকে বাংলা ভাষার দিকে তাকালে দেখি আমরা ইংরাজী, উর্দু, হিন্দি, জাপানি, ফার্সি সবধরনের ভাষা ব্যবহার করতে পারি । কিন্তু দেশের ভেতরে কোন একটা বিশেষ অঞ্চলের ভাষা হলেই নাক সিঁটকাই। আমাদের এই উন্নাসিকতার, এই দৈন্যতার কি কোন শেষ হবেনা? বৃটেনের ইনার সিটির গ্যাটো শব্দ বিøং বিøং হীরের ইংরাজী শব্দার্থ হয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারীতে যোগ হতে পারে, তবে আমরা কেন অযথা অনর্থক এই শব্দ ও ভাষা নিয়ে তর্ক করছি?’ এবং ড. মুকিদ চৌধুরী বলেন, ‘শব্দের সঠিক প্রয়োগে আঞ্চলিক শব্দও যে অন্য-একটি জগৎ তৈরি করতে পারে।’

 

এবার কবিতা হয়ে যাক।

ঠিক আছে।

 

জবানের বুনন

 

বিশ শতকের প‚র্ণ চাঁদের চন্দ্রিমায়, স্নান করো। চিন্তার রসদে, নীরিক্ষার সাধনা ঢালো। প্রদীপ্ত উচ্চারণে সূর্য্যে শোকোও-দূরাতীতে। ভিটাহীন বসত এজমালী করে, আজন্ম কর্মে ধরো। ব্যক‚ল হয়ে উঠে সকালের রোদ, নিতে যে শীতের শোধ। খাটিয়ায় বুনন করে ১২৩৭ দাগের পরবাসী বোধ। আটপৌরে জীবন, আমি বলছি নিশুতি রাতের গল্পের কথন। উচ্চমধ্যবিত্ত’র দু’ধারের দেয়াল, শ্রোতা হয়ে দাঁড়ায় সটান। এমনও গহন রাত্রি তুমি, চাঁদের বোতাম ছেঁড়া ভ‚মি।

 

দেহ থেকে শূণ্য মাইল, বিরাজ করে দেহের কায়া। দূরত্বকে আটকে রেখে, ধরে রাখে আমার মায়া। অন্তঃচ্ছায়া, বুকের মধ্যিখানে চায় শুতে। সুপ্ত হয়ে জেগে উঠে মাঝরাতে। টানা গদ্যের বালিশে ঘুম যাওয়া চতুর্থ প্রহরে-হাত রাখা সংবর্ধিত উচ্ছ¡াস। কবিতার বুকে আজ কেবলি মাটির দীর্ঘশ্বাস। শরীরের মৃত্যু হলে, একপ্রস্থ কাগজ থেকে যাবে খসড়া খাতায়-বহুকাল ধরে। দীর্ণতার অর্গল মুক্তি পায় বর্ষার চৌধারে। আপন ভ‚খন্ডে র’চে জবানের বুনন। একক, দশক, সহস্র-নিযুতের সংখ্যাগুলো অবশেষে গায়, এককের গান। মনত ধরে নাই ওরে-তোর পরানের বারমাসী।

 

এক বিচ্ছিন্ন সমষ্টিক ভ‚মিকা ঝরে পড়ে-পরিবেশ থেকে। নির্বাচিত কষ্টরা ধূন ধরে, আশ্রিত হয় কবিতার হোটেলে। আমার প্রণয় সঙ্গ খোঁজে, খন্ড-বিখন্ড বিবাদে মজে। বানভাসি ইচ্ছা; অনিচ্ছার রাস্তা মাপে বসে-প্লাবনের ঘাসে। বন্যার্ত জীবনের ভেলায় ভেসে ভেসে। দীর্ঘ কবিতার চলমান পৃষ্ঠা সঙ্গে, মানষতীর্থে মুষ্টিবদ্ধ হাতে-দাঁড়ায় তনয়। ঝুলিতে ভরা এক হিরন্ময় জীবনের আনিতো বিনয়। তৃষ্ণানার্তের হাঁড়ি-পাতিল অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুমায়। বাংলা মা-তখন তোমাকে মনে পড়ে যায়। আটষট্টিহাজার গাঁয়ের উনানের ধোঁয়ায়। একমাত্র সম্বল হারানো কান্নার ভাষায়।

 

প্রত্যাগত রজনীমুখে লিখে থাকা ভ‚মিকায়, মুখস্ত করা নাম। মেটোপথে অনাদরে ছড়িয়ে থাকা, পুষ্পমাসের এক আজলা ফুল-তোমায় দিলাম।

 

প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল কবে?

১৯৯৯ সালে। একুশে বই মেলায়।

 

অনুভ‚তি কিরকম হয়েছিল?

একটি গ্রন্থ অনেক ত্যাগের ফসল। তাই আনন্দদায়ক। প্রকৃতভাবে প্রকাশিত একটি গ্রন্থ যা আরেকটি গ্রন্থ তৈরিতে অবলম্বন হয়। ভাব ও ভাষায় নিজের একটি ডিকশন পাঠককে দেয়া-সে আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

 

আপনার জীবনে কিভাবে কবিতাকে জড়িয়ে ছিলেন?

সৌন্দর্য্য একটি প্রধান কারণ। এটাকে ধারণ করতে গিয়ে লিখতে লিখতে একসময় অভ্যস্থ হয়ে যাওয়া। আর অভ্যাসের সঙ্গে গাঁটছাড়া বেঁধে গেলে তা মানবিক তাগদা হয়ে উঠে। ম‚লত অন্তরের উৎসারণকে দায়ী করতে পারি।

 

আপনার কবিতার একটি বৃহৎ অংশ গদ্যরীতিতে যাচ্ছে? সর্বশেষ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘নির্বাসনে, নির্বাচিত দ্রোহ’-তে দেখতে পাই ..

হ্যাঁ, এটা স্বীকার্য। কবিতার বিস্তীর্ণ ভাবার্থজুড়ে থাকে উপলব্দি-অনুভবের সম্মিলন। সে সম্মিলনকে যদি আপনি নন্দনযোগ্য করে গড়তে পারেন, তবে-ই তা পাঠক-কে আন্দোলিত করে। আমি সেটা গদ্যে চেষ্টা করছি। আমার এসব নিরীক্ষাধর্মী এবং পরিবর্তনের আশে পাঠকের হাতে তুলে দেয়া ।

 

আপনার পিতৃপুরুষ ও তার পরিক্রমন সংক্রান্ত অথবা অষ্টপ্রহর জুড়ে মৃত্তিকার ধ‚সর পরিধি এরকম কবিতাগুলোতে আমরা যে দৃশ্য দেখি যথা-সময়ের বৃত্তান্তম‚লক পরিচিতি ইত্যাদি। তাতে কি কোন দর্শনের কথা বলতে চান?

দেখুন, শিল্প-সাহিত্য-সমাজ চিন্তার ঘনিষ্টজনদের আমরা প্রাজ্ঞজন বলে অভিহিত করি। তাঁদের লিখিত নিরীক্ষণধর্মী বিভিন্ন আকর গ্রন্থে অনেক বিষয়ের মৌল দর্শন দৃশ্যমান। আমাদের সংগ্রাম প‚র্ববর্তী এবং পরবর্তী সময় পর্যন্ত সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলো অর্থাৎ প্রাপ্তি এবং অবক্ষয়ের বহুধা বিস্তৃত বিভাজন আমার চোখে যেভাবে ধরা পড়েছে, তা আমি কবিতার ফ্রেমে বাঁধতে চেয়েছি। বাই দ্যা ওয়ে হয়তো লক্ষ্য করেছেন নতুন প্রজন্মের উত্থান প্রসঙ্গটি। টু বি অনেষ্ট পাশ্চাত্যে থাকলেও লিখতে বসলে আপনার মনন আপনাকে নিয়ে যাবে কাউন্ট্রি অব অরিজিন’র দিকে।

 

পিতৃপুরুষ ও তার পরিক্রমন সংক্রান্ত

 

একটি কাহিনী বুকের পাঁজরে পুটলি বেঁধে কোলাহল প‚র্ণ নাগরিক জীবনের পাশে’দি হেঁটে যান পিতৃপুরুষ। পলেস্তরা খসা স্থাপত্যের কিছু দুরে পাঁচিল ভাঙ্গায় ব্যপৃত সন্তানের পরিবার। নোনতা ঘামে ভিজে যাচ্ছে রূপান্তরিত মাটি হতে পাথর পর্যন্ত। সর্বনামের মাইজলা অবস্থানকে আড়াল করে সামনের তিমুখীতে মিশে যান দিব্যি। অপরিণত ধর্মজ’রা পাশেই পাথরে পাথর ছুঁড়ছিল। খেলাচ্ছলে নাকি অভিমানের অসময়ে ।

 

দৃষ্টিপঠিত দৃশের আতঙ্কিত অভ্যর্থনাটি রক্তের টানে-বুকের লুকানো দুর্বল অস্থিতে গেঁথে যায়। তিনি দগ্ধ হন। অকৃতকার্য অভিধাগুলো নির্ধারণ করেন, সাতত্য। স্মৃতির পাতা হাতড়ে এবং নিড়ানী চালিয়ে ফলবন্ত কোনো ভিয়ান স্পর্শের চেষ্টা চালিয়ে যান। নিঃসীমের অন্ধকারে আলোর হাতছানিতে যেভাবে বন্দে যায় ভোরের কৃষাণ। তিন পুরুষের চৌমুনায় এসে বিরতি দেবার কথা ভাবেন। কিন্তু কোন দিকে যাবেন? দ্বন্দের বিভক্তি নির্ণীত হলো না।

 

সংস্কারের প্রাচীর ভেঙে উঠে আসা দূরের তারুণ্যকে দেখে বেঁধে নেয়া বস্তুর অস্তিত্বটি পরখ করে, তিনি গহীনের দিকে অন্তঃস্থ হন।

 

অষ্টপ্রহর জুড়ে মৃত্তিকার ধ‚সর পরিধি

 

শুনছো-সুনাই, লুলার জটরে ভাসে বেহুলার ভেলা। এখানে বাড়তি জলের তলে জল। রৌদ্র বিম্বিত হয়ে তরঙ্গে নামে, আর গড়ে উঠে কানাকানির বাজার। থৈ থৈ স্রোত ভেঙ্গে তীরে এসে বিশ্রামে মজে, কবিতার অষ্টপ্রহর।

 

ওখানে তুমি কে পুরুষ? অসীম আকাশ দেখার চেষ্টা করো সসীম আন্ধা চোখে। পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুচরে আর হাঁটতে যাইনা। শুধু হাত রাখি। হৃদয়ের মরমী অংশে গ্রহন লাগে, এমন অতীতের বিপরীতে সময়ের স্থিরচিত্র চোখ রাখে-চোখে। স্মৃতির অধ্যায় স্থান নেয় সাদা কাগজের বুক চিরে। বর্ণমালার কালিসাঁটা বিরহী বাক্য’র ভীড়ে। কেউ জানেনা-আপন অথবা পর।

 

প্রণয় বৎসরের স্মরনিকায় জায়গীর নেয় ধূলাবালির ধূসর পরিধি। তারও অনেক প’র, আবহমান বাংলার স্মৃতি-বিস্মৃতির ক‚ল ধরে ফিরবো নিরবধি। কেননা- মৃত্তিকার সনে সম্বন্ধ বাঁন্ধিয়াছি, সেখানে বাঁন্ধিমুনু ঘর।

 

আধুনিক এবং চলমান-দুটোকে কিভাবে দেখেন?

দুটোই পাশাপাশি। কাব্যের ব্যয়াকরণে টিকে গেলে আধুনিক বলতে আপত্তি নেই।

 

কবিতার জন্মের সুস্পষ্ট সত্যটি আপনি কি মনে করেন?

ভাষার ইতিহাসের ধারাবাহিকতা এবং প্রতিষ্ঠিত নতুনত্ব।

 

কবিতায় আপনি যা প্রকাশ করতে চান তা কিভাবে তুলে ধরেন?

মূলবক্তব্য যা বলবে, পরবর্তিগুলো তা এজেন্ট ক্লাসের মতো ধারণ করবে। আমরা বিভিন্ন লেখার এলিমেন্ট-এ যে সারফেস্ দেখতে পাই তার ধরণের একেকটি স্পেসিফিক ইনটেনশন থাকে। হয়তো এগুলো অনেকেই এড়িয়ে যান। সাহিত্যে সামগ্রিক সাধনার একটি প্রক্রিয়া থাকে। কাব্যের বিভিন্ন স্টেইজ বিনির্মাণে লেখকগণ তাদের সৃষ্টিকে বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করেছেন। যেমন-রোমান্টিসিজম, ম্যাটেরিয়ালিজম, মিস্টেরিয়াজম ইত্যাদি বিভিন্ন ইজমে-এ চর্চা করেছেন। আবার বিশ্বাসের প্রসঙ্গটিও আসতে পারে। য়্যূ নো, হোয়াট আই মিন.. অনেকেই বিশ্বাসের সঙ্গে কবিতার বৈষয়িক সমগ্রতাকে দ্বিভাগ করেছেন। আবার একাংশ সেখানে বিলিফ এবং পোয়েম-এর সঙ্গে দোভাষীর সম্মিলন বা কম্পোজিশন ঘটান ।

 

এটা কি সার্বজনীন?

নো, ইটস্ মাই ওউন ভিউ। এনিবডি ওপোজ হেয়ারউইথ।

 

শেষের বক্তব্য সম্পর্কে?

হ্যাঁ। কবিতায় ব্যবহৃত সমাপনী অংশতে আমি একটি সার্বিক সারাংশ টানতে চাই। কবিতার চারদিকে আবহের যে ইমব্যাংকমেন্ট হয়, তার নির্মিতি-কে আমরা তাবত আলোর পরিস্ফুটন হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। হোয়্যারয়্যাজ উই ওয়ানা লাইক টু গো দেয়ার।

 

প্রিয় বিষয় কিভাবে নির্ধারণ করেন?

প্রিয় বিষয়টি অনেক ব্যাপক। তার আগে আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে সেটি কোন বিষয়ক। অ্যাবস্ট্রাক্ট, ইথিক্যাল অর হিউম্যান বিয়িং … সাবজেক্টিভ একাগ্রতা নিয়েই তা নির্ধারিত হয়। আই লভিন নেচারাল বিউটি, আ লট অফ থিংস। যেমন-বৃষ্টির শব্দ, বাতাসের আবহ, নীল আকাশ, মেঘ মালা, নদীর মোহনা এটসেট্রা।

 

নবাগতদের কোন বিষয়গুলো দৃষ্টিগোচর হয় আপনার?

ভাষাগত দিক, তাঁদের উপস্থাপনের স্টাইল ইত্যাদি।

 

উৎস হিসেবে কি কি অনুষঙ্গ ব্যবহার করেন?

প্রকৃতি-নদী-নারী ত্রয় থাকলেও সামগ্রিক.. ঐ যে সংজ্ঞার মতো ওভারফ্লো অফ ইমোশন-এ স্বাধীন সত্বার বিকাশে জীবন সংগ্রাম থেকে নেয়া সুখদুঃখ।

 

ব্যক্তির সঙ্গে কবিতার অস্থিত্ব- কিভাবে দেখেন?

মানুষ এবং ছায়া যেভাবে হাঁটে-সেরকম।

 

আপনার কবিতায় ভাষার ভিন্নতর প্রয়োগ দেখতে পাই. .

সেটাকে আপনি স‚ক্ষভাবে প্রয়োগও বলতে পারেন।

 

সূ²প্রয়োগ-কোন অর্থে?

এ শতাব্দীর পাঠক একটি দীর্ঘ বিবর্তনের ফসল। তথ্য-প্রযুক্তির যুগের উৎকর্ষতার দিক মনে রেখেই এ প্রচেষ্টা।

 

বলছিলাম অতিপ্রয়োগের কথা …

সে অর্থে ব্যাখ্যাটা হল যে, ভাষার সাধারণ নিয়মের বাইরে গিয়ে কোন শব্দ ব্যবহার করার স্বাধীনতা কবি’র থাকে। এটাকে ইংরেজীতে পোয়েটিক লাইসেন্স বলে। বাংলা সাহিত্যে তার উদাহরণ প্রচুর। যেমন-অশ্রæজল। অশ্রæ অর্থই চোখের জল। বাংলা সাহিত্যে এ শব্দটির বহুল ব্যবহার আমরা দেখতে পাই।

 

একজন লেখক হয়ে উঠবার পেছনে কাদের প্রেরণা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন?

সেটা বাবা-মায়ের। তাঁরাই ক্ষেত্র তৈরি করে দেন। মা ছোটবেলা হতেই সে পরিবেশে বড় হয়েছেন। তাঁর পিতা কথা সাহিত্যিক আকাদ্দস সিরাজুল ইসলাম-কে দেখেছেন। দেখেছেন যে, কিভাবে একজন লেখককে স্পেইস্ দিতে হয়। আমার মা, আমার লেখার টেবিলে পাশে বসে ইত্তেফাক পড়তেন। বিশেষ করে ইত্তেফোক এর সাহিত্য পাতার প্রতি তার আগ্রহ ছিল বেশী। আর জন্মগত এবং পারিবারিক প্রসঙ্গটির পরেই শিক্ষক, শুভার্থী, পাঠক-সমালোচকের স্থান। তাঁদের প্রেরণা।

 

আধুনিক এবং উত্তরাধুনিক এই টোটাল ব্যাপারটা চর্চার ক্ষেত্রে কিভাবে বিভেদ তুলে?

এখানে বিভেদ শব্দটি মানতে আমি রাজি নই। কেননা আধুনিকের গুনবাচক প্রয়োজনীয়তাই উত্তরাধুনিকতায় রূপান্তরিত হয়। তবে চর্চার ক্ষেত্রে চেতনাগত বাহুল্য থাকতে পারে।

 

টাইপোগ্রাফিক কবিতার ধরন কি রকম?

মেইনলি ইট স্টান্ডস্ অন অ্যাবস্ট্রাক্ট ফরমস্, লাইক-হোম, সিগার, রেইনস্, হিল এট্সেটরা।

 

কোন ধরনের গান আপনার প্রিয়?

অনেক। তবে মরমী গানের প্রতি দূর্বলতা একটু বেশী। বিশেষত তাত্তি¡ক গান। এ ছাড়াও দেশাত্ববোধক, জীবনমুখী গান, নাশিদ এগুলো ভাল লাগে। ভাল লাগে রবীন্দ্র সঙ্গীত, কাজী নজরুল, লালন, রাধা রমন, সিতালং শাহ, আরকুম শাহ, দীন হীন, আব্দুল লতিফ, আব্দুল করিম, নুশরত ফতেহ আলী খান, দাউদ ওয়ারন্সবি আলী, ক্যাট স্টিভেন্স, সামি ইউসুফ প্রমূখসহ আরও অনেক।

 

আধুনিকের নামে ভাষার যে নগ্ন প্রকাশ আমরা দেখি, তাতে কি মনে হয় এগুলো সাহিত্যের অংশ?

ভাষা একটি পবিত্র শিল্প। তার উপকরণ হচ্ছে বর্ণগুলো। আর পোষাক-মাত্রা। তার ঘর হ’ল-শব্দ এবং বাক্য সমষ্টি। ..এখন শিল্পের দেহ হতে বসন খুলে নিলে তা যেমন শিল্প থাকেনা, তেমনি নগ্নতার নগ্ন প্রকাশকে আমরা কিভাবে মেনে নেব? যদিও মকবুল ফিদা’র ভাষায়-নগ্নতাও শিল্পের অর্ন্তগত।

 

আপনি কবিতায় বহুবিধ মিথ ব্যবহার করেন। কেন?

আমার অনুভ‚তিকে যখন ভাষায় ট্রান্সলেট করি, এবং সে অভিব্যক্তিটির প্রকাশনে এর প্রতিফলন ঘটে। গ্রামীণ, লোকজ এবং মরমী-ধারাগুলো ধারণ করি বলেই কবিতায় এর প্রভাব ফুটে উঠে। এবং অনুভ‚তির অন্তঃস্থলে যা লালন করা হয় তা গোপন রাখা কষ্টকর। আসলে তার বর্ণনটাই একসময় কবিতা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। যার অন্তঃরীক্ষে আপনি বিভিন্ন মিথ’র ব্যবহার দেখতে পাবেন। কিছু কি-ওয়ার্ড থাকে যার প্রভাব পারস্পর্য সাক‚ল্যে ওগুলো রিলেটেড হয়ে যায়। ভাষ্যটা যখন লেখ্যতে রুপান্তরিত হয় রিয়ালিটির আলোচ্যসূচী, সে ক্ষেত্রে তার অর্ন্তভ‚ক্তিটি ধরে রাখে।

 

তাহলে, আপনার এরকম ধারার কবিতা শুনি।

 

তত্তে¡র উপাত্তে অদৃশ্য নিরঞ্জন

 

পড়শীনগরের মারেফত মহল্লায় বৃক্ষরোপন কর্মস‚চীতে বপন করি-দেহ তত্তে¡র বীজ। হায়া-শরম পানি ঢালে ঝুরি মাঠির চারিদিকে। সম্পর্ক দিয়ে বেড়া দেয় তত্ত¡কথা। লম্বালম্বি স‚র্যালোকের আয়তক্ষেত্রটি প্রার্থনা করে রুহের রুহানীর। তুর পাহাড়ের শীর্ষ-দেশে আশ্রিত হয় কবিতার নিগূঢ়তত্ত¡। উপাত্ত সাগরের ঢেউয়ের উপরে বসে কল্পনার রাইয়ত।

 

বীজটি অপরাহ্নের চারা হয়ে ফুলের আশে পন্থ পানে চেয়ে থাকে। ভ্রমরার বংশ লতিকায় বাঁধে দুল, নাকেতে নোলক। মুসা নবী বেহুঁস হইন, শুইয়া রইন, দেখিয়া দয়ালের ঝলক। ও কবিয়াল, কি কথা লিখ? অন্ধকার তাড়িয়ে ক্লান্ত স‚র্য অন্ধকারেই নিদ্রা যায়। খনে অনুভব করি অনুভ‚তির তীব্র দাহন, খনে দহন। রোজনামচার রঙধনুতে রঙ মিলাই দফায়-দফায়। অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে অবিরাম কমা টানে না-অদৃশ্য নিরঞ্জন।

 

ও মন রে, পড়শীনগরের মারেফত মহল্লায় বৃক্ষরোপন কর্মস‚চীতে বপন করি- দেহ তত্তে¡র বীজ।

 

শহরকুতুব এবং নবান্নের স্মৃতিচারণ

 

ফকিরালী, মুর্শিদীর নত্ত¡বিধান ছেড়ে দেয় নবান্নের উৎসবে। গুঞ্জনে মেতে উঠে উঁচু-নিচু টিলাঘেরা সবুজাভ গ্রামের মেটোপথ। ঘরের উত্তরকোনার চঁড়‚ই, সেই যে বেরিয়ে গেছে কবে? পাখ-পাখালিরা আল্পনা আঁকে, গেয়ে উঠে কৃতজ্ঞতার শপথ। দুরন্ত কৈশরের অবসর গড়িয়ে পড়ে-উঠোনে, পুকুরে, মাঠে, স্থায়িত্বহীন পদচারনায়। পরিবেশের প্রাচুর্যে ততদিনে কুশিয়ারার পানি সাগর ছুঁই-ছুঁই। শ্যামল বনভ‚মি গ্রহন করে ঝংকার-জলে আর ডাঙ্গায়। পুরাতনকে খোলে ফেলে নববর্ষ, অঙ্গে কোন অসুন্দর রাখে নাই।

জেগে উঠেন শহরকুতুব, শহরে-নগরে। গলিপথ ধরে আগাছা মুড়ে হেঁটে বলেন, বিদায় গত বছরের ছায়া-বিদায়। তারবাদে, সাদা গোলাপের নিঃশ্বাস ভাসে, দুরে-সুদূরে। মুঠোবন্দী নিদ্রা কাতর গ্রাম্য কুঠিরেরদায়।

নির্ণীত বাক্যও নিখোঁজ হয়ে যায়; সুনামিতে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মুখের মতো। লুকিয়ে থাকা আলোর নীচে, দুর হয়ে যাক-অন্ধকার যতো।

(আধর্ষপত্র কাব্যগ্রন্থের পান্ডুলিপি থেকে নেওয়া)

 

 

পুরানোদের অতিক্রম করার একধরনের স্পৃহা আমরা দেখি- এটা কেন হয়?

সৃষ্টির একটি অদম্য আগ্রহই একজন লেখক-কে তার প্রবীণদের অতিক্রম করতে সহযোগীতা করে।

 

ওয়েস্টার্ণ মডেলে লিখিত কবিতা বাংলা সাহিত্যকে কতটুকু সমৃদ্ধ করছে বলে মনে করেন?

কোন মডেল নির্মিত হয় তার গ্রহনযোগ্যতা থেকে। বিশ্বসাহিত্যের মাপকাঠির ধারায় তা বিচার্য। সেখানে অনুকরণ নাকি অনুসরণ হচ্ছে তা দেখার বিষয়। আমার কাছে ওয়েস্টার্ণ বা ইস্টার্ণ কোন বিষয় নয়। বিষয় হ’ল-তার অগ্রগামী ভাষাশৈলীর ব্যবহার এবং শুদ্ধতার নিশ্চয়তা।

 

কাব্যের অনুবাদ ম‚ল কবিতার ভাবম‚র্তি কতটুকু ধরে রাখে? আপনার একটি দীর্ঘশ্বাসের মৃত্যু এবং আমি এক উত্তরপুরুষ গ্রন্থদ্বয়ে কতটুকু পরিস্ফুটন হয়েছে?

কাব্যের অনুবাদ একটি কঠিন বিষয়। সেখানে ম‚ল অনুষঙ্গগুলোর স্থানিক এবং আপেক্ষিক বিষয়াদির পরিবর্তনের ভয় থাকে। অনেক জায়গায় এ রকম যে দেখা গেল আমি তা মিন করিনি, অথচ তা ব্যাখ্যাত হয়ে গেল। তাজা ফুলের বিপরীতে বাসী ফুলের অনুপাত যেমন। ইন সিম্বলিক নেম আকারে শব্দের সঙ্গে বক্তব্যের যে কনভারসেশন হয় তা অনেক ক্ষেত্রে দ্যোতকরূপে ধরা দেয়। যদিও এটা স্থায়ী মীমাংসা নয়। তবুও শব্দ যখন গ্রাফিতি রূপে ব্যবহার করা হয় তখন সেখানে রিপ্রেজেন্ট হতে পারে আবার মিসরিপ্রেজেন্ট হতে পারে। আই ড’ন ওয়ানা দ্যাট … রূপক অর্থবিষয়ক বাক্যগুলোর মান ধরে রাখা দুরুহ হয়ে উঠে। যাই হোক আই’ভ হার্ডলি ট্রাইড দেয়ার, বাট সামারি টাইপস্ অনলি..

ফর এক্সাম্পল …

 

একটি দীর্ঘশ্বাসের মৃত্যু

 

জানো কি

বুকের আগুনের পাশে তোমাকে কেমন সুন্দর দেখায়?

কিবা দুখে পুড়ছো তুমি কালখন্ডের পরিসরে

অন্তর্ক্রন্দনের স্রোতে,

আমি দেখবো তোমার ভান্ডারে

কত অভিমান আছে অভিশপ্ত বর্তমানে।

হারানো ধ্বনিপুঞ্জের অর্ন্তঘনিষ্ঠ রূপায়নে

‘লীন ভালোবাসা’ মঞ্চায়ন করে

গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দাও

ফেলে আসা একটি দীর্ঘশ্বাসের মৃত্যু’র খবর।

 

উঊঅঞঐ ঙঋ অ ঝওএঐ

 

উড় ুড়ঁ শহড়?ি

ঐড়ি নবধঁঃরভঁষ ুড়ঁ ষড়ড়শ

ইবংরফবং ঃযব ভরৎব ড়ভ ঃযব যবধৎঃ.

ওহ যড়ি সঁপয ংড়ৎৎড়ি ুড়ঁ যধাব

ঋধষষবহ রহ ফঁৎরহম ঃযব ষবহমঃযু

ঞযব ঢ়বৎরড়ফ রহ ঃযব ংঃৎবধস

ঙভ রহহবৎ পৎুরহম

ও ংযধষষ ংবব যড়ি সঁপয মৎধারঃু

ওং রহ ুড়ঁৎ ংঃড়ৎব,

অঃ ঢ়ৎবংবহঃ ও ধস পঁৎংবফ

ওহভড়ৎসরহম ঃযব রহহবৎ ৎবষধঃবফ

খড়ংঃ ড়িৎফং

খবঃ দঞঐঊ খঊঅঝঞ খঙঠঊ’ নব ংঃধমবফ

অহফ ষবঃ ঃযব ড়িৎষফ শহড়ি

ঞযব হবংি ড়ভ দউবধঃয ড়ভ ধ ংরময’

ডযরপয রং ষবভঃ নবযরহফ?

(একটি দীর্ঘশ্বাসের মৃত্যু কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া)

 

আমি এক উত্তরপুরুষ

 

জন্মান্তরের ভগ্নাংশটুকুন উইল করবো

অনাগত উত্তরাধিকারের হাতে

প্রাপ্ত কিংবা প্রেরিত নাড়ী ছেঁড়া ধন

বিপন্ন কোন ফসিল গর্ভপাতে

আমার অস্থিত্বের বিশ্বাসকে আরো

গভীরতর করে। বিদায়ী চাঁদের শেষ আলো

যেন জীব স্পর্শের জীয়নকাঠি-পবিত্র ক্ষণের প্রাঙ্গনে।

আমার ত্রিশ বছরের সম্পর্র্কের ভাজ্যে’র সমান

চাওয়া-পাওয়া, প্রাপ্তি দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য করো না কেউ।

নয়ন পানি বুকে বেঁধে হাল-ফিল করে রাখি,

ধরে রাখি আয়ন-ব্যয়ন।

নিজের না পাওয়ার অভিযোগ আমার

কষ্টের এক একটি ভগ্নাংশ। অতঃপর

মনোলিপির অধ্যায়ের সঙ্গে বিযুক্ত হচ্ছে

আগামীর পথ।

আমি কি অপেক্ষা করছি কারো?

প্রাণ ভুলানিয়া উত্তরসূরির?

বিরাণ ভবিষ্যতের সনে।

কাল কিংবা শতাব্দীর প্রাত্যহিক জীবনের ভাঁজে;

ধরায় বেঁচে থাকার প্রয়োজন আর বিশেষণের পারস্পর্যে

আমি এক উত্তরপুরুষ।

 

ও অগ ঞঐঊ উঊঝঈঊঘউঅঘঞ

 

ও ংযধষষ ঃযব ভৎধপঃরড়হ ড়ভ ঃযব ধভঃবৎষরভব

ঞড় ঃযব যধহফং ড়ভ যবরৎং ুবঃ পধসব হড়ঃ

ঞযব

-ংপধঃঃবৎবফ বিধষঃয ভৎড়স ঃযব

জবপবরাব ড়ৎ ৎবহঃ হবৎাব শহড়ঃ.

ওহ ঃযব পধারঃু ড়ভ ধহু ফধহমবৎবফ ভড়ংংরষ ঢ়ড়বঃৎু.

ইু উববঢ়রহম সড়ৎব, ঃযব নবষরবভ ড়ভ সু হধঃঁৎব.

ওহ ঃযব ুধৎফ ড়ভ ঃযব ঢ়ঁৎব সড়সবহঃ ধং রভ ঃযব ষরভব-ঃড়ঁপযরহম ংঃরপ

অং ঃযব ষধংঃ ৎধুং ড়ভ ঃযব সড়ড়হ রহ ঃযব ফবঢ়ধৎঃঁৎব

ঘবাবৎ সধশব সব ফরারফবফ রিঃয ঃযব ধিহঃরহমং ধহফ যধারহমং

ঙভ ঃযরৎঃু ুবধৎং ড়ভ সরহব.

ও শববঢ় সু ঃবধৎং রহ সু যবধৎঃ, ঢ়ৎড়ভরঃ, ধহফ ষড়ংং.

ঞযব পড়সঢ়ষধরহঃ ড়ভ সু হড়হ-যধারহম রং ভরহব

অং ধ ভৎধপঃরড়হ ড়ভ সু ঃৎড়ঁনষবং.

ঞযঁং, ঃযব পড়সরহম ধিুং ধৎব নবরহম ফরসরহরংযবফ

ঋৎড়স ঃযব পযধঢ়ঃবৎ ড়হ ৎবসবসনৎধহপব,

অস ও ধিরঃরহম ভড়ৎ ধহুনড়ফু, ধং যবরৎ?

ওহ ঃযব ফৎু ভঁঃঁৎব?

ওহ ঃযব ভড়ষফ ড়ভ ফধরষু ধমবং ড়ৎ পবহঃঁৎরবং,

অস ও ধহ যবরৎ রহ ঃযব হবপবংংরঃু ড়ভ?

খরারহম রহ ঃযরং ঁহরাবৎংব?

(আমি এক উত্তরপুরুষ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া)

 

অন্তরার ফরচা কবিতায় আমরা দেখি দাগ, খতিয়ান ইত্যাদি বিষয়াদি এসেছে। এই ধরনের শব্দগুলো কেন ব্যবহার করেন?

ইয়েস্, আই বিন থ্রু। আমাদের দেশে সেটেলমেন্ট বা ভ‚মি জরীপ যখন আসে তখন এই শব্দগুলো আমাদের সমাজে প্রচলিত হয়ে যায়। জমি-জমা’র বর্ণনা- মাঠ জরীপ, দাগ, খতিয়ান, শ্রেণী, চৌহদ্দি, পরগণা ইত্যাদি আমি কবিতায় বাঁধতে চেয়েছি। আধর্ষপত্র কাব্যগ্রন্থের পান্ডুলিপি থেকে একটি কবিতা বলছি-

 

ভাসান পরগনায়

 

আকাশের দামী মেঘ চিরে, হেলে থাকে স‚র্য্যালোক

এ বেলা দেখে আসা দিগন্তে খুঁটিহীন নীল ছাদ

শষ্য’র অনির্ধারিত উৎসমুখ, সত্য প্রবাদ।

সুস্পষ্ট আলোয় থাকা সুদূর, দুর্বিনীত সবাক।

 

নাতিশীতোষ্ণ নিম্ন অঞ্চলের পৌষমাস এখন

রচনা দৃশ্যে অভিমানের ঘোমটা তোল- সুকৃতি

এখানেও হাড়ভাঙ্গা দর্পন ছিল, ছিল বিস্মৃতি।

বুনিয়াদী স¤প্রীতি গড়ে যৌবন; করে মেহমান।

 

পথের ধারে সেইসব জন-বাসা বদল করে

দ্বীনতার মধ্যে পুরান মধ্যমা নেই, বিলক্ষণ

অবদান সকলের হাতে দিয়ে, দাঁড়ায় প্রবীণ।

লোকালয়ের লোকায়ত আকুতি, নিত্য সরে।

 

জনম মাঠির শত নিবেদন, পড়ে থাকে খাঁজে

পরগনা যে তলিয়ে যায়, ভাসান মাটির মাঝে।

 

‘অন্তরার ফরচা’ কবিতাটি মনে হয় একটি দীর্ঘশ্বাসের মৃত্যু গ্রন্থে গেছে?

হ্যাঁ।

 

অন্তরার ফরচা

 

তোমারে ভালোবাসার কথা কই,

তুমি আমারে বিরহের কথা শুনাও।

তোমারে অন্তরের কথা কই;

অন্তরের জমানো আবেদনের কথা,

অন্তরা…

তোমার কোন সম্পত্তিতে ভাগ দিওনা।

শুধু হৃদয় সম্পত্তির কতেক শতক,

আমাকে তসদিক করে দিও।

মাঠ জরীপে দখল ধরিয়েছি

আমাকে ক্ষমিও।

তোমার সুখের নেওয়ারীতে

একমাত্র আমাকেই টান দিতে দিও।

 

আপনার কাছে রবীন্দ্রযুগের পরবর্তীতে কোন দশক গুরুত্বপ‚র্ণ?

আমি সোজা তিরিশ দশকের কথা বলবো। ইটস্ এন ইম্পরট্যান্ট এ’রা অব বাংলা পোয়েট্রি, বিকজ য়্যু নো, দেন স্টার্টেড পোস্ট রবীন্দ্র ডিকেড-উই সে, আই থিংক য়্যু এগ্রি উইথ্ মি।

 

তার পরের দশকগুলো?

মানে শ‚ণ্য দশক পর্যন্ত? এর মধ্যে কম জমেনি, বিশেষত সাহিত্যের ঝুলিতে। গদ্য, বর্ণনাম‚লক ডিফারেন্ট্ এঙ্গেলের অনেক ভার্স এসেছে। অবশ্য কাব্য সমালোচকরা বলেন অনুসরনের কথা। টু বি কন্টিনিউড..

 

যদি বলি … জের ১২৩৭ দাগের কথা?

ঠিক আছে।

 

জের ১২৩৭ দাগ

 

যে-কষ্টের সওদা করে দূর্বাঘাসের মিহি কোষগুলো মাড়িয়ে মধ্যরাতে ঘরে ফেরে, তখন তারার বাসর পুষ্পিত করে আকাশ। হেঁটে হেঁটে গার্লস্ স্কুলের ডেফল গাছের দোষী অংশটুকু পেরুতে এখন আর ভয় করে না। বাল্যকালে এ পথাংশ’র জন্য অপেক্ষা করতে হতো কোন পথিকের। রাতের প্রাণীদের মাতম’র মধ্যে অতিক্রান্ত কালের সময়। অফ হোকনিয়া রোডে যাবার কালে জরাজীর্ণ কালভার্টটি বদলে গেছে। পরিবর্তিত অনেক কিছুর মতো। সময় শুধু বদলাবার দিন …।

 

যেজন পূর্ণিমায় বলত, ‘আজ চাঁদ খুব সুন্দর’। এখন সে চাঁদের নিচে গভীর অন্ধকার। যে বৈশাখে বলত- রাত করবিনে, তাড়াতাড়ি বাড়ি আসবি। ষড়ঋতুর দিবাতনের মধ্যে হতো পায়েস, রুটি পিঠা, সন্দেশ, শীতল পিঠা, নুন মশলা। ছেলেবেলায় হারিয়ে যাওয়া দিনে, তাগদাহীন-বাড়ি না ফেরার ছলে। কে যেন আটকে রাখে ..।

 

সওদার থলেটি নিখোঁজ ব্যক্তিদের পেপারকাটিং’র ভারে ভারি হয়ে ওঠে ক্রমাগত। পৃথিবীনির্মাণশৈলী’র উপাদানগুলো সিনার মাঝে জানুপাড়ি বসে। ন্যুব্জ দেহখানি কে কোল পেতে দেয় মৃত্তিকা-বৃক্ষ-তরুলতা। হয়তো এভাবে কোল পেতে নিয়েছিল-পৃথিবীর প্রথম কবর হওয়া মানুষের।

 

শরীর ধীরে ধীরে মিশে যায় … ধূলিকণা হয়। নবজন্ম হওয়া অজ্ঞাত জনসংখ্যা হেঁটে যায় কাল থেকে কালান্তরে। স্মরণচিহ্নটি শুধু রয় হাড়গোড়। যার সত্ত¡াধিকারী মাত্র এক মিটার একাত্তর সেন্টি মাপের অভাজন এক-ওয়ালি। যে আন্ধাইরো হাঁটে-অনালোকিত আলোর লাগি।

 

অনুকরণ বিষয়টি নিয়ে কি ভাবেন?

কোন ভাষাকে কেউ ট্রেডমার্ক করবেন, এ ডিক্লারেশন দিতে পারেন না। মনের ভাব প্রকাশে মিল থাকতে পারে। একই ব্যঞ্জনা আপনার মনেও আসতে পারে। তাতে দোষের কিছু নেই। দোষের হল কপি করা। এটা সেন্স মানায় না। আপনি বলতে পারেন না যে, বাংলা অভিধান’র এই শব্দগুলো শুধু আপনিই ব্যবহার করবেন। এই অধিকার গোটা বাংলাবাসী সংরক্ষণ করেন। যা করতে পারেন- আপনার প্রকাশ হয়ে উঠুক স্বতন্ত্র। একই ভাষা, একই কলায়।

 

এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। কাব্যে নিরীক্ষাবোধ-যাকে বলে, আপনি কিভাবে দেখেন?

আমি নিরীক্ষাধর্মী বোধকে আবেগের উপলব্দির সঙ্গে মার্জ হিসেবে দেখি। একসময় সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। ভাল কবিতার সৃষ্টি করে।

 

প্রতিবাদ এবং কবিতার ভাষা- কিভাবে দেখেন? তার সঙ্গে শ্রেণী বিভক্তিও?

শোষক এবং শোষিত শ্রেণী। শোষকরা আইন বাঁধে। শোষিতরা ভ‚ক্তভোগী হয়। কবিদের প্রকাশের কোন বাউন্ড্রি নেই। প্রতিবাদ সবখানেই সমান। সেখানে ভাষা একটি মাধ্যম মাত্র। কবিতা শোষিতের অধিকারের কথা বলে, বিশ্বজুড়ে।

 

যেমন?

 

বিবেক, ধবংস এবং অতঃপর

 

মগ্নতার সুলুক সন্ধানে নির্যাতিত মানুষের জন্য সহমর্মিতায় মর্মাহত হয়ে, ‘আমি কষ্ট পাচ্ছি’ বাক্যটি লিখা হোক, পৃথিবীর প্রতিটি কোণায়, প্রতিটি বিবেকের দেয়ালে। মানুষের প্রত্যাশা প‚রণের নেপথ্য শক্তির শ‚ন্যতায়, কান্নার শিকল ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মানবতা। কথিত সমৃদ্ধ জনপদের বিধ্বস্ত পুরাকীর্তিগুলো কালের সাক্ষী হয়ে থাকে। নির্যাতনের মর্মস্পশী ইতিকথাও মিলিয়ে গেছে ইমারত খসে। তখন দার্শনিকের দর্শনগুলো সংকলিত হয়ে বাঁচে। কেউবা আপ্লুত হয়- কেউবা যাঁচে। শাসন ও শোষণ মিলে শত বছরের সৌন্দর্যের অপার উৎসরণ, মাঘের রোদের মিহি দহনে মিশে যায় মাটিতে। সংবেদনশীল সত্তার একরৈখিক অবস্থান, এ যে অনুপাত নহে, সমানুপাত চাই-অভিব্যক্তির চিরায়ত প্রকাশ।

 

সমাধান উৎরে দেবার মত কোন আগ্রাসী মতবাদ বাঁধেনি কেউ। এখনো সাফ কবালা মূলে অংশীদারীত্বে’র অসমাপ্ত প্রকল্পগুলো সাম্রাজ্যবাদীরা বেঁধে রাখে লাল ফিতায়। কিন্তু আর কতদিন? নীরব প্রতিবাদের স্রোত একদিন জ্বলে উঠবেই। সেদিনের আলোর মিছিলের বাঁধ ভাঙা জোয়ারেই হবে তাদের প্রয়াণ।

 

অন্যকথায় পলিটিক্যাল প্রভাব?

ডোমিনেশন অ্যান্ড সাবজেক্শন। আই মিন নিরঙ্কুশ কতৃত্ব এবং পরাধীনতা দীর্ঘদিন ধরে চলমান হলে সেখানকার সমাজ থেকে সমাজে বাইনারি অপোজিশন অর্থাৎ যুগ্মবৈপরীত্ব গড়ে উঠে। উই অ্যান্ড আদারস্ বিষয়টি আরোপিত হয়। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তাদের ছেড়ে আসা কলনিক রাষ্ট্রগুলোতে একটি ক¤েপ্রডর শ্রেণী তৈরি করে এসেছে। এবং তারাই তাদের মিডিয়েটর হিসেবে কাজ করে। হোয়াট আই’ম সেয়িং … আমি প্রাচ্যের কথা বলছি। সেখানে তাদের সহায়ক ধারণা বা আইডিয়া তারা ডিস্ট্রিবিউট করে। এ ধরণের প্রেক্ষিতে আপনার প্রতিবাদ, আপনার যুক্তি-স্বাভাবিক ভাবে লেখাগুলোতে স্থান পাবে।

 

আমাদের সমাজ সাহিত্যকর্মী-দের বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে মনে করে। আপনি কি একমত?

দুঃখিত। আমি একমত নই। সাহিত্য নিয়ে চর্চা করা মানুষজনদের-কে বিভিন্নভাবে সমাজ-কে দেখতে হয়। সাধারন মানুষ থেকে এখানেই তাঁদের পৃথকত্ব। সমাজ থেকেই সাহিত্য উঠে আসে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম ভাঙ্গে মানুষ স্বপ্ন নিয়ে-আশা নিয়ে জেগে উঠে। সে চেষ্টা করে তার সারাউন্ডিংস্ তার মতো করে তুলতে। রিয়্যালিটির সঙ্গে পাঠকের যে প্রত্যাশা জড়িয়ে থাকে, সে সব বিবেচনায় রেখে ইউ হ্যাভ টু প্রেস ইয়োর কি বাটন, অ্যাজ ইউজুয়াল.. সমাজে যারা বাংলা সাহিত্যের অন লুকার থাকেন, আমি তাদের অ্যাড্রেস করছিনা। অ্যাড্রেস করছি তাঁদের, যাঁরা সাহিত্যের কিথ্ এন্ড কিন্। জীবন থেকে অনেক কিছু মাইনাস করতে হয়। অনিচ্ছা সত্বেও কমা পড়ে। তা মেনে নিতে হয়। ওয়ান ফাইন মর্নিং দেখবেন, কৃতজ্ঞতা আপনার দরজায় কড়া নাড়বে। এই ক্লাসিফিকেশন অন্যভাবে নেবেন না। অনেকে আজকাল কবিদের অনেকভাবে বিশেষায়িত করেন লাইক দিস্ এন্ড দ্যাট, বøা বøা…বাট আই’ড লাইক টু ছে- লিভ ইট, লেটস্ রিডেকর ইট ফর নিউ জেনারেশন।

 

সমকালীন সামাজিক অবস্থা ও বিশ্ব-পরিস্থিতি কি কোন ভ‚মিকা ফেলে-সেটা আপনার কর্মে?

একজন লেখক তার সমকালকে ধরে রাখেন। দায়বদ্ধতা-কে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেননা। যাদের সময়ের দর্পন বলা হয়। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি এবং সামাজিক অবস্থায় লেখকের বক্তব্য তার লেখনীতে প্রকাশ পায়। তখন নিজের দৃষ্টিভঙ্গি আর কবিতার বক্তব্য এক হয়ে যায়। সময়ের দাবীর স্বপক্ষে জনমত গড়তে এ ধরনের সৃষ্টি-সাহিত্য সমাজকর্মের প্লাটফর্ম বলতে পারি। আমরা সবাই জানি, রাতদিন মিলেই জীবন অতিক্রান্ত হয়। এখন আপনি সময়ের দিনের অংশ দেখবেন, রাত দেখবেন না অর্থাৎ সমাজের আলো-কে দেখবেন অন্ধকার দেখবেন না-তা হতে পারেনা। আলোর নীচেই তো অন্ধকারের বসতি। সে সকল কিছু ঘিরে থাকে লেখকের দায়িত্বপ‚র্ণ উচ্চারণ। সেটা হতে পারে পদ্যে-গদ্যে অথবা প্রবন্ধে। খারাপ সময়ের তুলনায় কবিতার মাধ্যমে দেখাতে হবে একটি সুস্থ্য সুন্দর জীবনের স্বপ্ন এবং শান্তিময় পৃথিবীর অবস্থান।

 

২০০৪ সালে লন্ডনের সাউন্ড রেডিও-তে স¤প্রচারিত বেতার বাংলা অনুষ্ঠানে আপনাকে নিয়ে খাদিজা রহমান প্রোগ্ররাম করেন। সেখানে আপনি মোহনা’র একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছিলেন। মনে আছে নিশ্চয়ই? খুব ইন্টারেস্টিং…

রাইট। মোহনার খোঁজে কবিতাটি নির্বাসনে, নির্বাচিত দ্রোহ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া। মোহনা বলতে বুঝিয়েছি গন্থব্যকে। মানুষের একটি গন্থব্য থাকে। সেটা নির্ভর করে সে কতটুকু অর্জন করেছে-তার উপর। বিষয়টি পরিষ্কার করতে হলে পুরো কবিতাটি বসিয়ে দিতে হয় যে।

 

মোহনার খোঁজে

 

এই আমিও হাঁটি পুলাছড়ার পানি ভেঙ্গে তালে তালে, মোহনার খোঁজে। টিলাগুলোকে নাইয়ে যে স্রোত অন্ধ, নদীর জন্য। সেই দাদাবদিখা’র আমল হতে কিংবা আরও..। ক্রমবর্ধমান ইচ্ছা এখন হাঁটু হতে পায়ার দিকে নামে। একপাশে পুনঃনির্মাণে ব্যস্ত শতাব্দী প্রাচীন বাঘমারা জামে মসজিদ। অন্যপার্শ্বে মৃত্যু হচ্ছে ফলিত শস্যের। পৌষমাইয়া কামলার ঘামে দলিত হয় আমনের বুক।

 

ছড়াহাঁটা মানুষটি তবুও থেমে নেই। অনুভ‚তির নিকট সমতলের গভীরতা ধীরে ধীরে বাড়ন্ত মনে হচ্ছে। ভাইছাব, মোহনা আর কত দুরই? থামলেন। থেমে এমনতরো দৃষ্টিতে দেখলেন, যেন জনমের প্রশ্নের সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে আসছেন তিনি। আরেকটু সামনে একদঙ্গল ছেলেমেয়ে জলকেলি খেলছে। তারা কি পেয়েছে খোঁজ?

 

স্রোত চিন্তনের কোমর ছুঁয়েছে সদ্য। ওখানে যেতে যেতে কত দ্রাবিড় ক্রীত হবে আর। নিতান্ত বশংবদ হয়ে গৃহীত হয়নি এখনো। জলপ্রবাহ তললৈ হতে উপরলৈ ক্রম হচ্ছে। ইন্দ্রিয় বলছে-মোহনায় যেতে হলে ডুবুরী হতে হয় আগে-নয়তো নাস্তি ।

 

নির্জন প্রহরের সঙ্গে অমানিশি সারাৎসার করে, এই আমিও হাঁটি পুলাছড়ার পানি ভেঙ্গে তালে তালে-মোহনার খোঁজে।

 

# ব্যাখ্যাটি এরকম যে, আমাদের গ্রামের উত্তর সীমানাজুড়ে একটি পানির নালা আছে। আমরা একে স্থানীয়ভাবে পুলাছড়া বলি। যদিও অনেক প্রশস্ত এবং বালু সমৃদ্ধ। যে নালাটি পার্শ্ববর্তী গ্রাম হতে আলাদাকরন চিহ্ন হিসাবে দালিলীক প্রমান। যাক্ যা বলছিলাম, এই আমিও হাঁটি পুলাছড়ার পানি ভেঙ্গে তালে তালে, মোহনার খোঁজে। এই হাঁটা বলতে বুঝিয়েছি বয়স অতিক্রম করা এবং বয়সের সঙ্গে মানুষের নির্ধারিত পথে অগ্রসর হওয়া-কে; যে পথ দিয়ে মানুষ মনে করে- সে তার কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছুতে পারবে। এই লক্ষ্যটা-ই মোহনাতে রূপান্তরিত করেছি। মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে তা পরিবর্তিত হতে পারে। বলা হয় বয়স বিশে-ইচ্ছা শক্তি, ত্রিশে-উদ্ভাবনী শক্তি এবং চল্লিশে-বিচার শক্তি অর্জিত হয়। এভাবে তারতম্য ঘটে। একপাশে পুনঃনির্মাণে ব্যস্ত শতাব্দী প্রাচীন বাঘমারা জামে মসজিদ। অন্যপার্শ্বে মৃত্যু হচ্ছে ফলিত শস্যের। পৌষমাইয়া কামলার ঘামে দলিত হয় আমনের দবুক। গ্রামের শতাব্দি প্রাচীন জামে মসজিদটি পড়েছে বাঘমারা বøকে। সেটা ভেঙ্গে তখন নতুন করে স্থাপত্য শৈলীতে সন্নিবেশিত করা হচ্ছে। অপরদিকে কৃষকের অর্জন এবং শ্রমজীবির অবদান মিলে গড়ে উঠে যুগের দাবী। সে দাবীটি সমাজের, পরিবর্তনের। যার প্রভাব পড়ে জীবনের পলে পলে। সত্যি করে বলতে কি, আমি কবিতার স‚তোয় আঁকতে চেয়েছি জীবন এবং সময়ের স্থিরচিত্র। এখানে তললৈ এবং উপরলৈ শব্দ গুলোর কথা হয়তো বলবেন। একুশ শতকের শুরুতে ভারতের কামরূপে গিয়েছিলাম। আসাম প্রদেশের গৌহাটিতে অবস্থানকালে শব্দগুলো মনে ধরে। অর্থ যথাক্রমে নীচে এবং উপরে। সবশেষে বলবো মোহনায় অথবা গন্থব্যে যেতে হলে আপনার প্রস্তুতি থাকতে হবে। নতুবা সেখানে পৌঁছানো দুরূহ কাজ।

 

কোন বিষয়গুলো আপনার কবিতায় প্রণিধানযোগ্য?

অগ্রগামী ভাষায় চিন্তার প্রকারভেদ, স্বতন্ত্র শৈল্পিক সত্বার বিনির্মাণকেন্দ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি এবং চলমান সময়ের ধারণ।

 

বিলেতে বাংলা কবিতার ভবিষ্যত- কি ভাবেন?

এই বিলেত। যেখানে রয়েছে মালটিকালচারাল সোসাইটি। সে সোসাইটি-তে বসবাস করে যারা কবিতা লিখে যাচ্ছেন তাঁদের সম্মান জানাই। যতটুকু হচ্ছে তা হতে আমরা আশা হত নই। কবিতার হাই স্ট্রীটে যে ভাল কবিতা যাচ্ছে না-তা নয়। যাচ্ছে। এখানকার কবিতা চর্চা আমার কাছে সাউন্ড মনে হয়। আপনি তো জানেন, কাব্যের সঙ্গে প্রোফেশনাল বিষয় বিযুক্ত। তবুও আমি বিশ্বাস করি হয়তো তাঁদের হাতেই তৈরি হবে সে কবিতা-যা তার বর্তমান-কে অতিক্রম করবে। এনিওয়ে, আই’ম ভেরী অপটিমিস্টিক।

 

এখানকার বাংলা পত্রিকাগুলো-তে যে সাহিত্যপাতা হয়, তা নিয়ে কি ধরনের মন্থব্য রয়েছে আপনার? মানে সাহিত্যমান …

দেখুন অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাংলা পত্রিকাগুলো আজকের এ অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। যে পত্রিকাগুলো আমাদের কমিউনিটির কথা বলে। দেশের পত্রিকা ও এখানের পত্রিকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। প্রতিনিয়ত কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখী হয়ে কাজ করতে হয়। আমাদের প‚র্বস‚রীদের প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে ঠিকে থাকতে হয়েছে। তাঁদের আত্মত্যাগের ফলে আমরা এ অবস্থানে আসতে পেরেছি। যদিও বিষয়টি প্রাসঙ্গিক না। তবু বললাম কারণ গিভ রেসপেক্ট, গেট রেসপেক্ট- একটি জনপ্রিয় সেøাগান। যাক্ যারা পাতাগুলো দেখেন তাদের ক্ষেত্রে সাহিত্যের সঙ্গে সম্পর্ক ও সম্পাদনা এ দুটি পারস্পরিক যুক্ত। অন্যদিকে সাহিত্যের পাতা বরাদ্দের সঙ্গে আর্থিক এবং সম্পাদকের সদিচ্ছা’র বিষয় জড়িয়ে রয়েছে।

 

ছোট কাগজ-কে কিভাবে ম‚ল্যায়ন করেন?

এটি সাহিত্যের অত্যন্ত সহযোগী মনে করি। কেননা ছোটকাগজ ফিল্ড লেভেল থেকে লেখক এবং লেখা কালেক্ট করে। তাদের দেয়া ফ্লোর ব্যবহার করে সে সবের মধ্য থেকে অনেক প্রতিভা বেরিয়ে আসে।

 

এবার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে যাই। আপনারা ভাই-বোন কয়জন?

ছয় ভাই, পাঁচ বোন।

 

আপনি?

দ্বিতীয়।

 

লেখালেখিতে আর কেউ এসেছেন?

আসেননি।

 

কোন এম্বিশন আছে আপনার? লেখালেখির বাইরে?

আছে। ছোটবেলায় দাদাজী জাহাজের গল্প বলতেন। সাগর পাড়ি দেবার কাহিনী, তখন ভাবতাম জাহাজেই স্থায়ী হ’ব। যখন বিলেতের গল্প বলতেন, কল্পনা করতাম বিলেতে হলে কেমন হয়? আবার যখন আন্ডারগ্রাউÐ রাজনৈতিক সংগঠনের কথা বলতেন তখন ভাবতাম সেরকম হলেই মনে হয় ভাল হয়। আমরা জানি যে, ছোটবেলায় মানুষের এইম বা এম্বিশন আবেগ নির্ভর থাকে । কারণ দাদাজী মাকমদ এ মাহমুদ, নেতাজির কংগ্রেস এর ত্যাগী কর্মী ছিলেন। তার পিতা দেওয়ান এম মনসুর আলী তাকে কংগ্রেসে যোগ দিতে প্রভাবিত করেন। ১৯১৮ সালে সেকন্ডারি শেষ করে এসিসট্যান্ট ডক ইন্জিন মাস্টার পদে যোগ দেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৯৪৩ সালে যুক্তরাজ্যে সেটেলড হন। ভারত স্বাধীন হবে সেই স্বপ্নে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্চেন্ট নেভিতে যোগ দেন। নেতাজি সুভাষ বসু কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করার পর তিনি সহ তার অনুসারীরা ফরওয়ার্ড বøকে যোগ দিয়ছিলেন। যুক্তরাজ্যে ফরওয়ার্ড বøক কর্মকান্ডের জন্য গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন এবং ১৯৪৬ সালে তিনি চাকরী হারান। এই স্বদেশী মানুষটি স্বাধীনতা যুদ্ধে তার শ্রম এবং সঞ্চিত টাকা দিয়ে সংগ্রামে সহযোগী হন এবং সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। তার বলা বাস্তব অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ গল্পগুলো আমার মনে এক ধরণের এডভেঞ্চার তৈরি করত।

 

এখন?

ওয়ার্ক টু ক্রিয়েইট এন এজুকেইটেড কমিউনিটি।

 

এই পরিচয়ের বাইরে আপনি কি করেন?

আইটি ট্রেড, ক্যাটারিং ট্রেড এবং ফ্রিল্যান্স-এ কাজ করি।

 

এই ব্যস্ততম জীবনে কিভাবে সময় পান?

ফ্যাক্ট ইজ হ্যাবিট। এ সকল নেশার মতোন। আমাকে হয়তো সারা জীবনই পোয়েট্রির নেইবার হয়ে থাকতে হবে। আর এই তো জীবন থেকে সময়কে বের করে নেয়া। যা লাগে তা হ’ল ঐকান্তিক কামনা আর মানসিক ও দেহ’জ পরিশ্রম।

 

গন্তব্য নিয়ে কি ভাবেন?

বিষয়টি ব্যাপক। শর্ট নোট দিয়ে বললে হয়তো এরকম দাঁড়াবে-দ্ আমাকেও যেতে হবে। রাইট? কিন্তু নন বিলিভারদের কথা ভিন্ন। যেভাবেই আমরা অনেক যুক্তি দাঁড় করাই, তাতে মনে হতে পারে থিঙ্গি ইয়েস্, আই’ম ওয়াকিং দ্যা রাইট ওয়ে। আমাকে দেখতে হবে সেগুলোর আউটপুট কি? ম্যান, স্থির করার আগে অন্তত একবার ভাবুন হোয়াটস্ গোয়িং অন। আইডিওলোজির রাউন্ড এবাউট থেকে আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে ইয়োর ডেস্টিনেশন। ফ্রম এ্যন্ড হোয়্যার ইউ’ড লাইক টু গো এন্ড হুইচ’জ বেস্ট ফর ইউ।

 

কবিতায় মাঝে মধ্যে অনেক শব্দ আমরা দেখি, যথা, হোকনিয়া, তিসরী বিল, ১২৩৭ দাগ এটা যদিও আপনার একটি গ্রন্থের পাÐুলিপির নাম এসব … আমার মতো অনেক পাঠক হয়তো শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত নন। আপনি কি বলবেন?

প্রায়োগিকভাবে এগুলো ব্যবহারের মধ্যে একটি সাইলেন্ট ক¤েপ্রামাইজ কাজ করে। যেখানে জন্ম, সেখানের আলো-বাতাস, পরিবেশ, মানুষজন ’সবের প্রতি একটি দায়বোধ থাকে। সহজে আপনি আমার এ পরিস্থিতিকে ট্রাইবাল এফেক্ট বলতে পারেন। সেটাকে আপনি ইগনোর করতে পারবেন না। হোকনিয়া আমাদের মহল্লার নাম, তিসরী বিল তো জানেনই এটি আমাদের গ্রামের পার্শ্ববর্তী একটি বিলের নাম এবং দেওয়ান মনসুর এস্টেটের অর্ন্তভূক্ত দেওয়ান ভিলা’র ১২৩৭ দাগ হলো প্লটের নাম্বার। আরও অনেক শব্দ রয়েছে সেগুলো হয়তো ব্যবহার কম হয়।

 

শেষ করার আগে আপনার ১২৩৭ দাগ কাব্যগ্রন্থের পান্ডুলিপি থেকে আমি আবৃত্তি করছি। কবিতাটির শিরোণাম- শুনুন

 

অবিরাম শ্রমসিদ্ধ করে দিন রাত ভেঙে, অজানা গলি ধরে হেঁটেও জানা নেই-জীব পিরামিডের তৈরি পদ্ধতি। সময়’র ওক‚ল পেরিয়ে এসে ওবা নিমগ্ন মানুষ-তোমার সুখ-দুখ দেয়া ব্যক্তি হয়তো বেঁচে নেই। এমন তো কেউ নেই, বলতে পারে-কষ্ট নেই।

 

সুখের ভিতরে অসুখীর বীজ জন্মে, জনমে জনমে। অস্থির অবকাঠামোর মধ্যেও বন্ধ হয় না সদর দরজা। স্কন্ধে বহনকৃত মৃত্যুর দাগ রয়েছে গোত্রবাসীর। প্রতিটি প্রাণের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে মৃত্যুর সে পথ। বুকের জমিনে পায়চারি করা অন্যমানুষ তাগাদা দেয়-মার্জনা গ্রহণ কর।

 

বিরাণভ‚মে অপ‚র্ব ছন্দে শৈল্পিক কারুকাজে ¯œাত হয় বৃষ্টি। ভ‚-ভাগ ভরে ওঠে সবুজ ছায়ে। সৃষ্টির বাগানে বিরাজমান জাগ্রত চোখ। স‚র্যোদয় আর স‚র্যাস্তে লগন-এ যেন ১৩০৩ সালের আজান শোনা ভোর স্পর্শ করা গৌড় রাজ্যের বুক।

 

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Share Now

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *