ওয়ালি মাহমুদ | শব্দপাঠ লিটলম্যাগ | লন্ডন,যুক্তরাজ্য | ২০০৮ সংখ্যা

ওয়ালি মাহমুদ

পুরো নাম মোহাম্মদ ওয়ালিউর রহমান মাহমুদ। বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার জলঢুপ পাতন গ্রামের ১,মতিউর রহমান মাহমুদ রোডের দেওয়ান ভিলা’য় ১লা আগস্ট ১৯৭২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন পাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। একই বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে লাউতা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক এবং সিলেট এমসি কলেজে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। সিলেট আইন মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১৯৯৫ সালে, কিন্তু প্রবাসে চলে যাবার কারণে সম্পন্ন করতে পারেননি। শিক্ষার প্রতি অফুরাণ আগ্রহে তিনি বিলেতেও বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করেন। টাওয়ার হ্যামলেটস্ কলেজ থেকে সিইএলটি করেন। লেভেল ২-৩, প্রিপারেশন ফর ওয়ার্ক কোর্স করেন এইচএবিসি ইংল্যান্ড থেকে। সিসি ইন আইসিটি (ইন্টার.); সোসিয়্যাল ইংলিশ; পিপল অ্যান্ড প্লেইসেস; এডুকেশন অ্যান্ড ওয়ার্ক উল্লেখযোগ্য কোর্সগুলো তিনি ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডশ্যায়ারের অপাল এডুকেশন থেকে সম্পন্ন করেন। ম্যাগাজিন সাব-এডিটর হিসেবেও কাজ করেন এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট, অপাল এডুকেশন হার্টস-এ।[1]

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী পরিবারের সদস্য হিসেবে শৈশব থেকেই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, ক্ষুদিরাম থেকে বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ এসব পাঠ্যক্রমের মধ্যেই ওয়ালি মাহমুদের বেড়ে ওঠা। তাঁর প্রপিতামহ দেওয়ান এম. মনসুর আলী অখন্ড ভারতের ইন্ডিয়ান ন্যাশন্যাল কংগ্রেস (আইএনসি) ও ভারত ভাগের পর আওয়ামী লীগ রাজনীতির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে আমৃত্যু জড়িত ছিলেন।[2] পিতামহ মাকমদ এ মাহমুদ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রবাসী সংগঠক এবং তাঁর পিতা শিক্ষাবিদ মতিউর রহমান মাহমুদ মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। এঁদেরই যোগ্য উত্তরসূরী- ওয়ালি মাহমুদ।[3] ওয়ালি মাহমুদের মাতামহ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর হলওয়েল মুভমেন্ট আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহনকারী বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, কথাসাহিত্যিক এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তবাংলা পত্রিকার সম্পাদক, আকাদ্দস সিরাজুল ইসলাম এবং মাতামহী মিসেস ময়রুন্নেছা চৌধুরী।[4]

স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় ১৯৯০ সালে পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা তাঁর বাড়ী রেইড করে। তখন তাঁর দুটি গ্রন্থের পান্ডুলিপি ও স্বৈরাচার বিরোধী, সাম্প্রদায়িকতা এবং বর্ণবাদ বিরোধী লেখা অনেক কবিতা নিয়ে যায়। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে বাংলাদেশে ও ইংল্যান্ডে জনমত তৈরীসহ বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত থাকায় তাঁকে হত্যার হুমকিসহ বিভিন্নভাবে অপরাজনীতির শিকার হতে হয়। বাংলাদেশে তাঁর পরিবার বিভিন্ন হুমকির শিকার হন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধীতাকারী-রাজাকার, শান্তি কমিটি, আল বদর, আল -শামসসহ যারা সংশ্লিষ্ট ছিল-তাদের তথ্য এবং গণহত্যার তথ্য সংগ্রহ করেন। একজন চারণ সংগ্রাহক হিসেবে প্রাসঙ্গিক তথ্য উপাত্তসমগ্র মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার কাজে এবং রণাঙ্গণ ৭১ গ্রন্থে ব্যবহৃত হয়।[5]

১৯৮৬ সালে দেয়াল পত্রিকার মাধ্যমে প্রথম লেখালেখির হাতে খড়ি। এ সময়ের বাংলা কবিতার সঙ্গে যার ঘর-সংসার। কাব্যের জগতে কখনো গদ্যের তীরে হাঁটতে হাঁটতে কুশিয়ারা, কখনোবা পদ্যের তীর ঘেঁষে সুনাই অথবা বিলেতের টেমস অবধি। অব্যয়ী বিবর্তনা দিয়ে কাজ করেন। কবিতার ঘর বানাতে বিশুদ্ধ বাংলার গাঁথনি’দি শুরু করেও কাঁচামাল হিসেবে কোন সময় নাগরী, আবার কোন সময় হোকনিয়ার পাশ দিয়ে তিস্রী বিলের ফুলেল বসন্তও বাদ যায়নি। প্রকৃতি, নদী ও নারীর সমষ্টি তার লেখায় মূর্ত। ভালবাসার বিমূর্ত আবেগকে তিনি কাব্যের চয়নিক শব্দ-কল্প,উপমার বোধানুকূল প্রয়োগ করেছেন বিভিন্নভাবে।

নিজের প্রজ্ঞা ও সৃষ্টিশীলতার সুহৃদ দিয়েছেন সমকালকে। সুশীলতা, বিনয় ও সৌজন্যতায় গড়া একজন সভ্যতাভিমানী মানুষ তিনি। সেটা তাঁর কবিতায়ও প্রতীয়মান। পরিমিতিবোধ সম্পন্ন কবিসত্ত্বার নবায়নে নিয়ত: মগ্ন তিনি-তাঁর কবিতায়। ব্যক্তি ও সমষ্টির প্রতিনিধি হিসেবে ওয়ালি মাহমুদ কাজ করেছেন-সমাজের বিভিন্ন অঙ্গণে। একজন নিভৃতচারি ও সাহিত্য এবং সমাজ নিবেদিত মানুষ হিসেবে জ্ঞান পিপাসু ও নির্মোহ জীবনের বিস্তৃতিই তাঁর চারণক্ষেত্র।

তাঁর চিন্তা চেতনা ও রাজনীতির দর্শন-একই সূত্রে গাঁথা। বর্ণময় জীবনের আত্মমগ্ন-কবি ওয়ালি মাহমুদ। কাব্যের সংব্যান খোলার আশায়-তিনি কখনো বৈরাগী হয়ে প্রেম তীর্থ ভ্রমণে, কখনো উদ্দাম তারুণ্যে ভালোবাসার অসীম আকাশ ছুঁয়েছেন বিচিত্র আঙ্গিকে। অন্যদিকে অনুভূতির তীব্র দাহনের উপস্থিতি তার কবিতায় লক্ষণীয়। নিয়মমাফিক বৃত্তের বাইরে স্বতন্ত্র অবস্থানের পুনঃপুনঃ প্রচেষ্টায় মলাটবন্দি কাব্যের পঙ্ক্তিমালার সযত্ন সৃষ্টি, কবিতাকে চিনিয়ে দেয় গভীরভাবে।[6] তাঁর সাক্ষাৎকার- যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সম্প্রচারিত-সাউন্ড রেডিওতে ২০০৪ সালে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব খাদিজা রহমান লাইভ অনুষ্ঠানে ওয়ালি মাহমুদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার অন এয়ারে সম্প্রচারিত হয়।

 

>> যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত শব্দপাঠ লিটলম্যাগ ২০০৮ সংখ্যা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

রেফারেন্স

১ জীবনকথা, ওয়ালি মাহমুদ : জীবন ও সাহিত্যপাঠ, ড. মুকিদ চৌধুরী।

২  সম্পাদকীয়, মতিউর রহমান মাহমুদ স্মারকগ্রন্থ, আবু মকসুদ সম্পাদিত, প্রবাস প্রকাশনী, লন্ডন, ২০১৯।

৩  এক নিবেদিত স্থপতি, মতিউর রহমান মাহমুদ স্মারকগ্রন্থ, হাবিব আহমদ দত্তচৌধুরী, প্রবাস প্রকাশনী, লন্ডন, ২০১৯।

৪.  জীবনকথা, ওয়ালি মাহমুদ : জীবন ও সাহিত্যপাঠ, ড. মুকিদ চৌধুরী।

৫  ওয়ালি মাহমুদ : জীবন ও সাহিত্যপাঠ, ড. মুকিদ চৌধুরী।

৬  জীবনকথা, ওয়ালি মাহমুদ : জীবন ও সাহিত্যপাঠ, ড. মুকিদ চৌধুরী ।

৭ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের ফ্লাপ এবং লন্ডনের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে ১৫ জুলাই, ২০০৪ সনে, কবি নজরুল সেন্টারে (৩০, হ্যানবারী স্ট্রিট, লন্ডন ই১) কবি ওয়াালি মাহমুদ-এর ৫ম কাব্যগ্রন্থ ‘নির্বাসনে, নির্বাচিত দ্রোহ’-এর প্রকাশনা উৎসবের নিমন্ত্রণ পত্র থেকে নেয়া।

৮  সাহিত্যকথা, ওয়ালি মাহমুদ : জীবন ও সাহিত্যপাঠ, ড. মুকিদ চৌধুরী।

৯  লোকন লিটলম্যাগ, লন্ডন, পৃষ্ঠা ২৯৫।

Share Now

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *