ওয়ালি মাহমুদের কাব্যগ্রন্থ | তাজ উদ্দিন আহমদ | সাপ্তাহিত সুরমা পত্রিকা | লন্ডন,যুক্তরাজ্য

ওয়ালি মাহমুদের কাব্যগ্রন্থ

তাজ উদ্দিন আহমদ

একজন কবির হৃদয় পদ্ম যখন কোন একটি নান্দনিক ভাবনা ও উপলব্ধিতে বিকশিত হতে থাকে তখন সেই বিকাশোন্মুখ উপলব্ধির উন্মাদনা আসে ভাষা, আসে ছন্দ, আসে শব্দ সঞ্চায়ন, আসে শব্দ বিন্যাস, আসে গতি। সেই গতির পুষ্পক রথে আরোহন করে কবি চিত্ত বিচরণ করে দেহ হতে দেহাতীত জগতে। সেই বিচরণের নৃত্য ছন্দে সৃষ্টি হয় এক নতুন ভূবন, সেখানে কবির একক আধিপত্য- অবাধ বিচরণ। যেখানে কবির অবস্থান জাগতিক সীমাবদ্ধতা-নিয়ম শৃঙ্খলার উর্ধ্বে। স্বপ্নীল আবর্তে কবিসত্বা একাকার হয়ে যায়। নি:সীম ভাবনায়- জন্ম নেয় কবিতা।

যৌক্তিক কারণে বলা হয়ে থাকে কবির অন্তরের অন্তস্থিত কোমল কানন কবিতার আদি অকৃতিম বসতভূমি। তাই অন্তর দিয়েই কেবল কবিতার সান্নিধ্য লাভ সম্ভব। যুক্তি তর্ক-বিচার বিশ্লেষণ বা সূক্ষ আলোচনা নয়। কবিতার অথৈ সাগরে খুঁজে নিতে হয় কবির অস্তিস্থ। একজন কবিকে জানতে হলে তার চিন্তা ও জ্ঞানধারার উপর পরিবেশ বলয়ের প্রভাব আবশ্য বিবেচ্য। সেই দৃষ্টিকোন থেকে স্থুল ভাবে কিছু একটা আলোচনা করা যেতে পারে। আলোচনার শুরুতে কবির একান্ত ব্যক্তিগত পরিচয় জেনে নেয়া ভাল।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী পরিবর্তিত অনুসঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে প্র-ধাবিত কাব্যধারা জীবন ঘনিষ্টতায় একান্ত অন্তরঙ্গ। আর এই অঙ্গণে নবাগতদের পদধ্বনি অপেক্ষাকৃত স্বাতন্ত্র্যে ঝংকৃত। সেই স্বতন্ত্র কবি সত্ত¡ার উত্তরাধিকার নিয়ে আত্মপ্রকাশ কবি ওয়ালি মাহমুদের।

কবি ওয়ালি মাহমুদের কাব্য সাধনায় এক বিকাশোন্মুখ উদ্ভিন্ন তরুণ ব্যাক্তিত্ব। একটি মার্জিত সাহিত্য সুন্দর শিল্পীত আবহে লালিত। ওয়ালি মাহমুদের পিতা একজন আদর্শ শিক্ষক। বিয়ানীবাজার থানার লাউতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরূপে কর্মরত। মায়ের দিক থেকে রয়েছে সার্থক সাহিত্য সাধনার বলিষ্ঠ উত্তরাধিকার। প্রয়াত কথা সাহিত্যিক আকাদ্দস সিরাজুল ইসলাম কবির মাতামহ। কাজেই শিক্ষ-সংস্কৃতি ও সাহিত্যকর্মের সমন্বিত প্রভাবে কবির ব্যক্তিসত্ত্বা ও কবিসত্ত্বা দুইই প্রভাবিত।

ওয়ালি মাহমুদের বড় পরিচয় তিনি প্রানপ্রাচুর্র্যে ভরপুর একজন তরুণ কবি। বাল্যকাল থেকে লিপ্ত রয়েছেন কাব্য সাধানায়। এরই মধ্যে তার বেশ ক’টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আমার হাতে এসেছে তার সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘ভালবাসার পোয়াত’, ‘যৈবতী শোন’, ‘একটি দীর্ঘশ্বাসের মৃত্যু’ ও ‘আমি এক উত্তরপুরুষ’।

ভালবাসার পোয়াতি এবং যৈবতী শোন

 এ দু’টির কাব্যগ্রন্থের মালঞ্চ নিয়ে কবিতার প্রাঙ্গণে আবির্ভাব কবি ওয়ালি মাহমুদের। প্রকাশ কাল- একুশে বই মেলা, ১৯৯৯। গ্রন্থসত্ব: লেখক। অলংকরণ: উত্তম সেন। প্রকাশক: শিকড় পাবলিকেশন, আলোকচিত্র: মাজহারুল হক পিন্টু। মূল্য: পঁয়ত্রিশ টাকা। উৎসর্গ: এম. শওকত আলী এবং ‘যৈবতী শোন’ উৎসর্গ করা হয়েছে কথা সাহিত্যিক আকাদ্দস সিরাজুল ইসলামকে।

দু’টি গ্রন্থেই মোট ষোলটি করে কবিতা সন্নিবেশিত হয়েছে। একই সময়কালে বা সনে, একই প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান হতে গন্থ দু’টির আবির্ভাব। কাজেই কোনটি প্রথম আর কোনটি দ্বিতীয় তা বলার উপায় নেই। যৌক্তিক কারণে কাব্য দুটিই কবি’র প্রথম কাব্যগ্রন্থ বলা যেতে পারে।

প্রচ্ছদ পরিকল্পনা গভীর দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। অলংকরণে নতুনত্ব ও সংযমের সুস্পষ্ট ছাপ বিদ্যমান। উভয় গ্রন্থে বাঁধাই মুক্ত-পত্র গর্ভে পর্যায়ক্রমে ষোলটি করে মোট বত্রিশটি জীবন্ত কবিতা কিন্তু একটি করে মলাটযুক্ত খামে বন্দি। গ্রন্থে সন্নিবেশিত কবিতাগুলোর কোন স্বতন্ত্র শিরোণাম দেয়া হয়নি। ভাবনা ভিন্নতা অথবা প্রথম হ’তে শেষ পৃষ্টা পর্যন্ত একই কবিতা বলা যেতে পারে। একটি ব্যতিক্রমী উদার অভ্যূদয় অথবা প্রকাশের নবতর ভঙ্গি- উদ্যত শিরে জানান দিল ‘আমি এসেছি তোমাদের মাঝে’ মাটির মমতা রসে পূর্ণচিত্ত ‘ভালবাসার পোয়াতি। অথবা ‘যৈবতী শোন’ চিরন্তন সত্যের উপলব্ধির সংস্কারের কারাগারে নতুন ঊষা’র অপেক্ষমান। যেমন ভালবাসার পোয়াতি-তে ‘কোন কোন সময় চিরচেনা মানুষকেও অচেনা লাগে, সে আমার সে-ই মনে হয়না।’

কবিতার প্রতি পর্বে ভালবাসার নৈর্ব্যক্তিক আবেদন নানা ঢঙ্গে নানা রঙে বিমূর্ত হয়ে উঠতে ব্যগ্র। যেমন ‘গভীর আবেগে কাছে টানলো/ তার তপ্ত নি:শ্বাস আমার বুকের হাড়গুলো ভেঙ্গে দিতে চাইলো।’

প্রতিটি পংক্তিতে রয়েছে ‘অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত  সাহস।’ ‘যৈবতী শোন’ গ্রন্থের ১ম কবিতা ‘নীল আকাশ বুকে লোমশ তারা/ অনুভূতি, দেখবে, চল/ প্রকৃতির বিছানায় যাবে।’ দিয়ে যাত্রা শুরু। চিরন্তন কামনার অন্তহীন আবর্তে প্রকৃতির ঐশ্বর্যের সমুদ্রে অনুবর্তন জাগিয়ে দিয়ে শুরু কাব্যমালা। চতুর্থ কবিতায় ‘কবিতার প্রাণকেন্দ্রে লুক্কায়িত কবি’ আত্মোপব্ধির তীক্ষধার জিজ্ঞাসার রাতে বিধ্বস্ত চিত্র খুঁজে পেতে চায় শান্তির নীড়।

সব কয়টি কবিতা সুখ পাঠ্য। কখনো অন্তর্জালা কখনো বা প্রশান্তি তারপর ভালবাসার ঐকান্তিকতা দুর্বোধ্যতায় পরিব্যপ্ত।

প্রতি পাতায় উত্তম সেন অংকিত চিত্র, অস্পষ্ট জলছাপ- বিরহ বিধূর কোন ললনার ছবি। মনে করিয়ে দেয় মেঘদূত কাব্যে কান্তা বিরহে কাতর যক্ষের কথা। যেমন-

‘মেঘ দরশন সুখীর পরাণ

করে ব্যাকুলতাময়

কি কহিব তার প্রিয়া দূরে যার

কন্ঠ ছাড়িয়া রয়।’ (মেঘদূত)

আবহমান রক্ষণশীল ভাবনার বেড়াজাল ছিন্ন করে অঙ্কুরেই তার কবিতাগুচ্ছ বিকাশোন্মুখ সত্যকে রূপকাশ্রিত অশ্লীলতায় বিম্বিত করেছে। যা বেশীরভাগ পাঠকের নিকট বিভ্রান্তি বলে মনে হবে। তাইতো বোখারার কবি মাহমুদের (মাহমুদ সামানী) কথা স্মরণ করতে হয়,

 

‘It is easier to cross a hundred mountains

Or to spend hundred years in prison

Than to explain the truth to a stupid person’.

 

একটি দীর্ঘশ্বাসের মৃত্যু:

 কবি ওয়ালি মাহমুদ-এর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘একটি দীর্ঘশ্বাসের মৃত্যু’ ২০০১ সালের একুশে বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশক- মোস্তফা সেলিম। গ্রন্থস্বত্ব- মিসেস সুফিয়া রহমান। প্রচ্ছদ এঁকেছেন- অভিজিত চৌধুরী। প্রচ্ছদ পরিকল্পনায় সংযম ও মুন্সীয়ানার পরিচয় রয়েছে। মূল্য-৬০/-টাকা। উৎসর্গ করা হয়েছে সিলেটের অন্যতম গৌরব গণমানুষের কবি দিলওয়ার-কে। এই গ্রন্থে মোট ২১টি কবিতা স্থান পেয়েছে। প্রথম কবিতার নাম- ‘বাংলার বনমালী। গ্রন্থ শেষ হয়েছে ‘এক প্রগতির যোদ্ধার কথা’ দিয়ে।

বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রত্যেকটি কবিতা ও অন্যান্য বিষয়ের ইংরেজী অনুবাদ পাশাপাশি সন্নিবেশিত হয়েছে, যা স্মরণ করিয়ে দেয় রবি ঠাকুরের গীতাঞ্জলীর কথা। বাংলা কাব্যগ্রন্থের ভূমিকা লেখা হয়েছে ইংরেজীতে। ভূমিকার বঙ্গানুবাদ থাকলে ভাল হতো।

আগেই বলেছি গ্রন্থের শুরু হয়েছে ‘বাংলার বনমালী’ শীর্ষক কবিতা দিয়ে। বাংলার বনমালী এক অনন্য রূপক ব্যক্তিত্ব। বনমালীকে খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেলাম তার নন্দন কাননে ফুটেছে বং বেরঙের নানা জাতের ফুল। গভীর যুগ যন্ত্রণায় আন্দোলিত বাংলার বনমালীতে চিত্রিত হয়েছে অন্তহীন সংশঢ, চাওয়া-পাওয়া, শিলন-বিচ্ছেদ, ব্যর্থতা-সার্থকতার এক জটিল জীবন বোধ। ফুটে উঠেছে অর্ন্তদ্বন্দে ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি।

অন্য একটি কবিতা ‘প্রান্তিকের পারে’ তাতে বিধৃত হয়েছে চিনন্তন প্রত্যাশার দুরন্ত ব্যগ্রতা। একটি দীর্ঘশ্বাসের মৃত্যু কবিতায় রয়েছে-

‘লীন ভালবাসা মঞ্চায়ন করে

গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দাও

ফেলে আসা একটি দীর্ঘশ্বাসের

মৃত্যুর খবর।’

এমনি করে প্রত্যেকটি কবিতা যেন একটি কড়ি মাধ্যমে বাঁধা। বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে জীবনের পরম সত্যকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করা হয়েছে। কবিকে দেখা যায় কখনো শরীরী কখনো অশরীরী রূপকল্পে আবিষ্ট। কখনো জীবাত্মা ও পরমাত্মা মধ্যকার চিরন্তন সম্পর্ক। বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ব্যক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কখনো প্রিয়তামা রূপে কখনো বধু কখনো বা কন্যা রূপে। কখনো বা নিশি অবসানে অন্তর কাননে ঝরে পড়া শিউলী ফুলের শ্বেতশুভ্র বিছানা- আবার কখনো হৃদয় হতে নি:সারিত রক্তের ধারায় ছন্দিত অনুভূতি। অনবদ্য রচনা অপূর্ব নির্মাণ। প্রতিটি শব্দ প্রতিটি উপমা, প্রতিটি রূপকল্প যেন বাছাই করা এক একটি উজ্জ্বল মুক্তো।

‘একটি দীর্ঘশ্বাসের মৃত্যু’র সীমানা পেরিয়ে সেই একই আরতি, আবেদন ও উচ্ছাসের উত্তরণ ঘটেছে কবির পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ ‘আমি এক উত্তরপুরুষ’-এ।

আমি এক উত্তরপুরুষ

প্রকাশকাল- একুশে বইমেলা ২০০২। প্রকাশক- উৎস প্রকাশন। গ্রন্থসত্ব- কবি।প্রচ্ছদ- অভিজিত চৌধুরী। উৎসর্গ- কবি আল মাহমুদ।

বইটির অঙ্গসজ্জা চমৎকার। জীবন দর্শনের আরশি সম্বলিত প্রচ্ছদ সত্যিই দৃষ্টিকাড়া। সর্বমোট ২১টি কবিতা নিয়ে এই কাব্যগ্রন্থের ভান্ডার। প্রথম কবিতার নামে কাব্যগ্রন্থের নামকরণ। ঠিক নিচেই আবার ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ও I AM THE DESCENDANT, WALI MAHMUD. লেখকের প্রথম দুটি কাব্যগ্রন্থে লেখকের নাম ‘ওয়ালিউর রহমান মাহমুদ’ ছাপা হলেও পরবর্তি গ্রন্থসমূহে ‘ওয়ালি মাহমুদ’ ছাপা হয়ে আসছে। এবং ওয়ালি মাহমুদ শ্রবণে উচ্চারণে সহজ সাবলীল সুগম্য।

গ্রন্থের প্রথম কবিতায় আবহমান কালচক্র তাড়িত এক ক্লান্ত পথিকের চাওয়া-পাওয়া ও বর্ধিষ্ণু আকাঙ্খর চিত্র প্রতিবিম্বিত হয়েছে। নামকরণ সার্থক বলা যেতে পারে।

কাব্যগ্রন্থের প্রধান বৈশিষ্ট্য ইংরেজি অনুবাদ। সেজন্য হয়তো গ্রন্থকে দু’পর্বে ভাগ করা হয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি পর্ব। প্রথম পর্বে ২৫ পৃষ্টা পর্যন্ত বাংলা মূল কবিতা। দ্বিতীয় পর্বে ১-২৩ পৃষ্টা পর্যন্ত মূল কবিতা সহ আনুষাঙ্গিক সব কিছুর ইংরেজি অনুবাদ সন্নিবেশিত হয়েছে। অনুবাদ করেছেন লেখক নিজে। নিজের সৃষ্টি কর্মকে ভাষান্তরের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেয়ার প্রয়াস প্রশংশনীয়। তবে ইংরেজি অনুবাদ যে খুব একটা হৃদয়গ্রাহী, উন্নত মানের এবং নির্ভূল হয়েছে তা বলা যায় না। কোন কোন ক্ষেত্রে আক্ষরিক ও শাব্দিক অনুবাদের ফলে মূল ভাব পর্যুদস্ত হয়েছে অথবা পূর্বাপর সমন্বয়ের ব্যত্যয় সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু কবির মাতৃভাষা ইংরেজী নয়, সামগ্রিক অধিকার-দৈন্যতা  এর জন্য দায়ী। যে কারণে মাইকেল মধূসুদন একদিন বলেছিলেন-

‘হে বঙ্গ! ভান্ডারে তব বিবিধ রতন,

তা সবে (অবোধ আমি) অবহেলা করি

পর-ধন- লোভে মত্ত- করিনু এমন

পরদেশে ভিক্ষাভিত্তি কুক্ষনে আচারি।’

ত্রুটি সত্ত্বেও কবির সার্বিক প্রচেষ্টা সার্থক ব্যতিক্রম। এই গ্রন্থে কবির ভাবনা পাখনা মেলেছে বিচিত্র ভঙ্গিতে। যেখানে কবির আত্মদর্শন ও আত্ম বিশ্লেষণের মাধ্যমে জৈবিক ধারণার আর্শীতে জীবনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে উপলব্ধি করতে চেয়েছেন।

‘নিজের না পাওয়ার অভিযোগ আমার

কষ্টের এক একটি ভগ্নাংশ। অত:পর

মনোলিপির অধ্যায়ের সঙ্গে বিযুক্ত

আগামীর পথ।’

(আমি এক উত্তরপুরুষ)

 

 

‘The complain of my non having is fine

As fraction of my troubles

Thus the coming ways are being diminished

From the chapter of remembrance.’

(I AM THE DESCENDANT)

 

কবিতার মজা নদীতে অন্ত:স্রোতা ভাবনা অনাস্বাদিত রাগ-তরঙ্গের আকর্ষণে কবি চিত্তকে প্রতিনিয়ত ক্ষয় করেছে। জীবনবোধের গতিকে নিয়ন্ত্রিত করার সযত্ন প্রয়াস প্রায়শ: স্পষ্ট হয়ে উঠেছে প্রকৃতিগত উপমার অলংকরণে। যেখানে স্থান পেয়েছে ফুল, পাতা, পাখী, চাঁদ, নদী প্রভৃতি। আর উপমার মারুত-রথে ভর করে কবির কল্পনা পাখনা বিস্তার করেছে নি:সীম দিগন্তে, শেলী’র ‘স্কাইলার্কের’ মতো অথবা ইকবালের দুরন্ত শাহীনের মতো;

‘তু হ্যাঁয় শাহীন

পরওয়াজ হ্যাঁয় কাম তেরা

তেরে সামনে আসওয়া

আওর বি হ্যাঁয় তেরা।’

 

কখনো বা কবির অসংযত কল্পনা হোঁচট খেয়েছে প্রক্ষিপ্ত বাস্তবতার আঘাতে। আবার কখনো ধ্রুপদের স-সঞ্জাত শব্দ প্রয়োগে প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। যেমন-

 

‘..দূর হতে দেখতাম।

দেখতো মন, ভাবতো অনেক কিছু।

আজ দেখি, একটি কার্ড

অ্যা ম্যাসেজ অব উইডিংস- শিরোণামে।

বড় কষ্ট হচ্ছে বুকে, কিন্তু কেন?

 

কতটুকু চাওয়া ছিল, বুঝিনি আগে।’

(অ্যা মেসেজ অব উইডিংস)

 

অথবা

 

‘[..] চারপাশে কত আপনজন

সারা দিনমান বন্ধনের আঁচলে

মাঝরাতে কখনো ঘুম ভেঙ্গে যায়

বিছানা হাতড়িয়ে খুঁজে ফিরি

একই বোধের পুনরাবৃত্তি হয়

মনে থাকেনা, সে নেই।’

(কষ্টের ফেরারী-এক)

 

প্রতীকী উপলব্ধির মধ্যে কবির ভালবাসা দেহাতীত জীবনকে অবলম্বন করে অবিনশ্বর রূপলাভ করেছে। যেখানে জীবন মৃত্যুর খেয়া নৌকায় চড়ে সত্ত¡ার রূপান্তর ভালবাসার চির অমরত্বে লীন হয়েছে।

 

‘[..] মূলত: জীবন লুপ্ত হয়নি

মৃত্যু মুছতে পারেনা জীবনকে

তুমি বিস্তৃত হতে পারোনি, হবার আগে

মুকুলিত করো-

রোপন করে যাও আরেকটি জীবন বৃক্ষ,

আরেকটি শিকড়।’

(শিকড় রেখে যাও)

 

কাব্য গ্রন্থটি পাঠকের মনে নতুন আবহে, নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করবে বলে আমার বিশ্বাস। কবিতা সমষ্টির নির্মাণ শৈলীর মধ্যে নিহিত রয়েছে- আগুন, পানি, মাটি, মারুতের এক অভূতপূর্ব সমন্বয়। চাওয়া-পাওয়া, সুখ-দু:খ, ধন-দৈন্য, মিলন-বিচ্ছেদ, অভাব-অভিযোগ, ত্রুটি-বিচ্যুতি সব মিলিয়ে ‘আমি এক উত্তরপুরুষ’ কাব্যগ্রন্থের লেখক ওয়ালি মাহমুদের ভবিষ্যত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়- তাতে সন্দেহ নেই। বাংলার কাব্যাকাশে আরো একটি নক্ষত্রের আবির্ভাব হোক এবং সেই নক্ষত্রের নাম হোক কবি ওয়ালি মাহমুদ।

 

 

 

 

 

 

দ্র: আলোচনাটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিত সুরমা পত্রিকার ১৩০১ ইস্যুতে ১৫ই মে ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়।

 

 

 

 

Share Now

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *